লালমনিরহাটে সরকারী ঔষধ উদ্ধার, ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা!
লালমনিরহাটে সাড়ে ৬ লাখ টাকার সরকারী ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় ৩টি হাসপাতালের ৩ জন স্টোর কিপারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সদর থানা পুলিশ।
বুধবার (২৪ জুন) বিকেলে মামলাটি দায়ের করেন লালমনিরহাট সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান মিজান।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেলে লালমনিরহাট পৌরসভার ড্রাইভার পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সরকারী ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ দম্পতিকে আটক করে পুলিশ।
অভিযুক্ত স্টোর কিপাররা হলেন- লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোর কিপার মোয়াজ্জাম হোসেন মুরাদ, আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার একেএম মাহবুব আলম ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার জাকারিয়া।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধামাইরটারী গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের ছেলে আঃ রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া (৪২) ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াছমিন (৩৮)।
তাঁরা লালমনিরহাট শহরের ড্রাইভার পাড়া রেলওয়ের কোয়াটার ভাড়া নিয়ে পান ও ঔষধ বিক্রি করতেন।
লালমনিরহাট সদর থানার পরিদর্শক (ওসি) মাহফুজ আলম লালমনি প্রতিদিন-কে জানান, দীর্ঘদিন ধরে লালমনিরহাট শহরের ড্রাইভার পাড়া রেলওয়ের কোয়াটার ভাড়া নিয়ে পান ও ঔষধ বিক্রি করতেন আঃ রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া। তিনি পান ও ঔষধের দোকানের আড়ালে সরকারী হাসপাতালের ঔষধসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বাড়িতে রেখে বিক্রি করছেন।
এমন একটি গোপন খবরের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশ মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেলে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৭৫টি ওজন পরিমাপকযন্ত্র সহ ১৭ কার্টুন বিভিন্ন ধরনের সরকারী ঔষধ জব্দ করে পুলিশ। এ সব ঔষধের বাজার মুল্য ধরা হয় প্রায় ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪০৫ টাকা। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায়ে আঃ রাজ্জাক ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াছমিনকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব ঔষধ সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ হাসপাতালের বলে স্বীকার করেন। উদ্ধারকৃত ওজন পরিমাপযন্ত্র বাজারে এক হাজার ৫শত টাকা হলেও সরকারী ভাবে ধরা হয় প্রতিটা ৩ হাজার টাকা। এ যন্ত্রটি মাত্র ৮শত টাকা দামে ক্রয় করে পুনরায় বাজারে এক হাজার দুই/তিন শত টাকায় বিক্রি করেন চক্রটি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এভাবে সরকারী হাসপাতালের কার্টুনে প্যাক করা ঔষধ ও সরঞ্জাম ক্রয় করে গোপনে সারা দেশে বিক্রি করছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন আটককৃতরা।
তাঁদের দেয়া তথ্য মতে তদন্ত করে বুধবার (২৪ জুন) সদর থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করের সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান মিজান।
এ মামলায়, লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোর কিপার মোয়াজ্জেম হোসেন মুরাদ, আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার (ভারঃ) একেএম মাহবুব আলম ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার জাকারিয়া এবং আটক দম্পতির ভাই হামিদুর রহমানকে (৪৫) আসামী করা হয়েছে।
তবে, আটক দম্পতি আঃ রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াছমিনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
সরকারী হাসপাতালের ঔষধ আত্নসাৎ এবং কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগে ৩ জন স্টোর কিপারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
মামলার নথি বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে বলেও জানান সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম।
এ বিষয়ে, জানতে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. নির্মলেন্দু রায় লালমনি প্রতিদিন-কে বলেন, মামলার কাগজ পেলে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। ঔষধ উদ্ধারের ঘটনায় জেলার সকল হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্টোরের কাগজপত্র যাচাই কালে সঠিক প্রতিয়মান হয়েছে।
তবে, এ ঘটনায় কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। আগামীতে করা হবে বলেও জানান সিএস।