ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহর নির্মাণ করেছে ইরান
সাগর উপকূলের ভূগর্ভে বহু ক্ষেপণাস্ত্র শহর নির্মাণ করেছে ইরান। এসব ভূগর্ভস্থ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির নৌ ইউনিটের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী রেজা তাংসিরি। পার্সটুডে, আল জাজিরা।
৬ জুলাই সোমবার বহুল প্রচারিত এক গণমাধ্যম প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে ইরানের সুবহে সাদেক সাময়িকীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাংসিরি বলেন, আমাদের শত্রুরাও এটা ভালো করেই জানে পারস্য উপসাগর ও মোকরান উপকূলজুড়েই রয়েছে আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহর। তিনি বলেন, এছাড়া পারস্য উপসাগর এবং ওমান সাগরের সর্বত্রই আমাদের উপস্থিতি রয়েছে।
এমন স্থানেও আমাদের উপস্থিতি যেসব জায়গার কথা শত্রুরা কল্পনাও করতে পারে না। তাদের জন্য অকল্পনীয় স্থানেও আমরা শত্রুদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিতে পারি। তাংসিরি বলেন, সাগর রক্ষার জন্যও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বা বাসিজের ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সেখান থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই নৌযানের সব ধরনের তৎপরতা আমরা নজরদারি করি।
আমরা জানি ওই যানটি ঠিক কোথায় অবস্থান করছে এবং কী করছে। এসব নৌযান ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা অনেক। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং নৌযানের খবর আসছে। এমন সব নৌযান আসছে; যা শত্রুদের বিস্মিত করবে। এদিকে ভূগর্ভস্থ মিসাইল সিটি প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতির ক্ষুদ্র নমুনা সম্পর্কে ইসলামী বিপ্লবের চল্লিশতম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘দেজফুল’ নামের অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে ইরান। ভূগর্ভস্থ একটি কারখানায় নির্মিত এই স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রটি সোমবারই উন্মোচন করা হয়েছে। দেশটির ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি প্রথমবারের মতো ওই ক্ষেপণাস্ত্র শহরটিও প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে স্মার্ট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেজফুল। স্মার্ট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেজফুল ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
দেজফুলের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আইআরজিসির কমান্ডার ইন-চিফ মেজর জেনারেল মুহাম্মাদ আলি জাফারি বলেছেন, মাটির অনেক গভীরে নির্মিত মিসাইল-সিটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে পশ্চিমাদের বাগাড়ম্বরের জবাব দেয়া হয়েছে। পশ্চিমারা ভাবতো ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি আর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরানকে কোণঠাসা করে ফেলেছে এবং ইরানের বৃহৎ পরিকল্পনাগুলো বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিপ্লবের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইরানের পরিপূর্ণ সক্ষমতা অর্জনের কথা সগর্বে ঘোষণা করেন। জাফারি বলেন, ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আত্মরক্ষামূলক এবং জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোর অধীন। এ নিয়ে কোনরকম আলোচনার সুযোগ নেই বলেও তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘হুভেইযে’ গত সপ্তাহেও ইরান ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘হুভেইযে’ উন্মোচন করেছে।
ইরানি বিশেষজ্ঞরাই বিশ্বের সর্বোন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটির নকশা প্রণয়ন থেকে নির্মাণ পর্যন্ত সব কাজ করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেছেন, খুব কম সময়ের মধ্যে হোভেইযে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য প্রস্তুত করা যায় এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রটি খুব নিচু দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম। ‘খুররামশাহর’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইরানি বিশেষজ্ঞদের তৈরি আরেকটি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র; যার ধ্বংস ক্ষমতা অনেক বেশি। এসবই প্রতিরক্ষা শিল্পে ইরানের স্বনির্ভরতা এবং চোখ ধাঁধানো অগ্রগতির প্রমাণ। সেই সঙ্গে ইরানের ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং বিচিত্র চাপ প্রয়োগের ব্যর্থতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ভূগর্ভস্থ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ শহর প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ইরান ইউরোপ ও আমেরিকাকে এ বার্তাই দিতে চেয়েছে যে, দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার উন্নয়নে ইরান কারও তোয়াক্কা করে না। তবে ইরানের এই প্রতিরক্ষা শক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বিপ্লবপ্রিয় আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বন্ধুত্ব ও শান্তির বার্তাবাহী।