ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে বরিশালের এককালের রক্তাক্ত জনপদ
বরিশাল ব্যুরো : জেলার এককালের সর্বহারা অধ্যুষিত রক্তাক্ত উত্তর জনপদ বলেখ্যাত বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ও সাবেক আগরপুর ইউনিয়ন ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে। আগামী ২১ জুনের ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে দিন দিন উত্তাপ ছড়িয়ে পরেছে ওই ইউনিয়নে।
গত কয়েকদিন থেকে মধ্যরাতে ফাঁকা গুলির শব্দে ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দিবাগত রাত আটটার দিকে ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর শিলনদিয়া রাস্তার মাথা নামক এলাকায় বসে নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতিতে তার সমর্থক ও ভাড়াটিয়া লোকজনে হামলা চালিয়েছে। এতে আনারস মার্কার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের চাচাতো ভাই কামরুল আহসান হিমু খানের পাঁচজন কর্মী-সমর্থক আহত, তাদের ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও একটি ভাঙচুর করা হয়।
আনারস মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল আহসান হিমু খান অভিযোগ করেন, এ হামলার পর পরই নৌকার প্রার্থী সরদার মোঃ তারিকুল ইসলাম তারেক ও তার সহদর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের নেতৃত্বে তাদের বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য সশস্ত্র অবস্থায় শিলনদিয়া বাজারে অবস্থান করেন। তিনি (হিমু খান) আরও অভিযোগ করেন, গত তিনদিন থেকে জনশুন্য প্রার্থী তারেকের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা মধ্যরাতে একাধিক ফাঁকা গুলি করে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের হামলা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ওই এলাকায় ফের বড়ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা ছড়িয়ে পরে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক প্রথমে আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ ও পরে থানার বিপুল সংখ্যক পুলিশ শিলনদিয়া বাজারে পৌঁছে কঠোর ভূমিকা পালন করায় সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি নেয়া উভয়দলের কর্মী-সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অপরদিকে নৌকার প্রার্থী সরদার মোঃ তারিকুল ইসলাম তারেক অভিযোগ করেন, প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর সমর্থকরা বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথমে তার নির্বাচনী প্রচার কাজে ব্যবহৃত মাইক ও ইজিবাইক ভাঙচুরসহ তার পাঁচজন কর্মী সমর্থককে মারধর করেছে।
সরকারের আইন প্রয়োগকারী নির্ভরযোগ্য একটি সংস্থার গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁপটি মেরে থাকা তৎকালীন সময়ের দুর্ধর্ষ সর্বহারা ক্যাডার ও পাশ্ববর্তী উপজেলার সন্ত্রাসীরা জনশুন্য বিশেষ এক প্রার্থীর পক্ষালম্বন করে নির্বাচনের মাঠে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের টার্গেট নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন। এজন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও দেশে ফেরা এককালের দুর্ধর্ষ সর্বহারা সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের পূর্বে হত্যাকান্ডের মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটাতেও প্রস্তত রয়েছে। বিশেষ করে ওই (আগরপুর) ইউনিয়নে অতীত নির্বাচনের পূর্বেও হত্যাকান্ডসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অসংখ্য নজির রয়েছে। যেকারণে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই ইউনিয়নের সাধারণ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ওই ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি উভয়প্রার্থীর পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি (ওসি) আরও বলেন, ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন অবস্থাতে কাউকে সংঘাত করতে দেয়া হবেনা। সেজন্য পুলিশ সদস্যদের কঠোর অবস্থানে রাখা হয়েছে।