বিনোদন

বাবুদের শিল্পী পরিবার

Share this:

অভিনয় বা সঙ্গীত বা নৃত্য শিল্পী যুগলের কথা আমরা অনেক শুনেছি বা দেখেছি। কিন্তু একই পরিবারের বাবা-মা-ভাই-বোন প্রত্যেকেই অভিনয় শিল্পী এমন পরিবার আমাদের দেশে হাতে গোনা মাত্র ক’জন আছেন। তাদেরই একটি পরিবারকে নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। গল্প, আডডায় মেতে থাকবো কিছুটা সময়। এরই মাঝে জেনে নেবো এই পরিবারের শিল্পের বিভিন্ন শাখায় বিচরনের নেপথ্যের কথন।

শফিউল আলম বাবু, ২১ মার্চ চাঁদপুরে জন্ম। শৈশব, কৈশর কেটেছে চাঁদপুরেই। দশম শ্রেনীতে পড়ার সময়ই বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীতে যোগ দেন। শুরু হয় অভিনয়শীলন। লেখাপড়ার সুবাদে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে জাহাঙ্গীর নগর থিয়েটারে কিছুদিন নাট্যাচার্য সেলিম আলদীনের সহচর্যে ছিলেন। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন এ উপস্থাপনায় ও অভিনয়ে তালিকাভুক্ত হন। ২০০০ সাল থেকে টানা ২০০৭ পর্যন্ত টানা উপস্থাপনা করেন বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘সপ্তডিঙা’। এটিই তার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট এনে দেয়। বাবু জানান, বিটিভির সিনিয়র প্রযোজক ও গীতিকার নুরুজ্জামান শেখ (প্রয়াত) আমাকে উপস্থাপনার নিগুঢ় সত্য কিছুটা আবিষ্কার করতে শিখিয়েছেন। তার জন্যে আমি সারাজীবন তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। একটানা দীর্ঘ সময় সপ্তডিঙা অনুষ্ঠানটি আমি পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা করে গেছি। তার পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করেছি। অবশ্য এরই মাঝে বিয়েটাও সেরে ফেলেছি। নাটক, সিনেমা, ওটিটির এই সময়ে এসেও বাবু থেমে নেই, অভিনয় শিল্পের সাথেই এখন তার নিত্য বসবাস। দীর্ঘ পথচলার মাঝে ১০০টির উপরে একক নাটক, ২২ টি ধারাবাহিক, ৫টি ওয়েব সিরিজ, ৭ টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাতে বাবু অভিনয় করেছেন। কৃতিত্বের সাক্ষর হিসেবে পেয়েছেন বাচসাস, বাবিসাস, এজেএফবি, ডিসিআরইউ, পুরষ্কারসহ অসংখ্য পুরষ্কার। আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, চীন, দুবাই, বাহরাইন, মালয়েশিয়ায় অনেক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন। মৃত্যুর পূর্বক্ষন অবধি শিল্পের মাঝেই থাকতে চান বাবু।

তার বাবুর স্ত্রী

নাবিলা আলম পলিন, ৫ নভেম্বর ঢাকায় জন্ম নেয়া পলিন বৃশ্চিক রাশির জাতিকা। খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠা পলিন ২ সন্তানের জননী। জুডুতে বাংলাদেশ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্ত ও ইন্টার ডিষ্ট্রিক গেমসে মার্শাল আর্টে গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত। মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট ও টু ডান হোল্ডার, ব্যাডমিন্টনে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়। এতো গেলো খেলাধুলা, এবার আসা যাক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের কথা। নজরুল একাডেমীতে দুই বছর সংগীত সাধনাও করেছিলেন। মঞ্চ নাটক করতে করতেই বাংলাদেশ বেতারে ১৯৯৪ সালে, ১৯৯৯ তে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়ে তালিকাভুক্ত হন। তারপর থেকেই পুরোদস্তুর অভিনেত্রী। এর মাঝে অবশ্য ১৯৯৬ তে বাবু’র সাথে বিয়ের পার্ট চুকান। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের প্রথম ছেলে সন্তান অন্তিক তার কয়েক বছর পর ২য় সন্তান কন্যা অর্পা। কিন্তু পলিনের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের অভিনয় কখনোই থেমে থাকেনি, যা অদ্যাবধি চলছে। এ যাবত পলিন দেড়শ’র অধিক একক নাটক, ১২ টি ধারাবাহিক নাটক, ৫ টি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ৬টি ওয়েব সিরিজ ও ফিল্ম করেছেন। অর্জন করেছেন বাচসাস, বাবিসাস, এজেএফবি, আমরা কুড়ি পুরস্কার।

তাদের ছেলে

ঈশরাক আফ্রিদ অন্তিক, ডিসেম্বর এর ২৭ তারিখ জন্ম নেয়া অন্তিক এখন ২৫ বছরের টগবগে যুবক। গীটার হাতে গান শোনাতে শোনাতে অন্তিক জানায়, অভিনয় শৈলির মাঝে বেড়ে উঠলেও গান গাইতেই তার বেশি ভালো লাগে। মাত্র ৫ বছর বয়সে থেকেই অন্তিক পেয়েছিলো হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সান্নিধ্য। তার প্রায় ৩৭ টি নাটক ও ২ টি সিনেমায় অন্তিক অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলো। কথা প্রসঙ্গে অন্তিক জানায়, নয় নম্বর বিপদ সংকেত সিনেমার মহরতে অসংখ্য সাংবাদিক, শিল্পী ও সুধীজনের সামনে অন্তিককে উদ্দেশ্য করে স্যার বলেছিলেন-এই ছেলেটা অভিনয় করতে চায় না কিন্তু ও যা করে তাই অভিনয় হয়ে যায়, তাই ও আমাকে ছাড়তে চাইলেও আমি ওকে ছাড়িনা। এই বাক্যটি আমার জীবনে আশির্বাদ হয়ে থাকবে। অন্তিক বিবিএ সম্পন্ন করেছে, লেখাপড়ার কারনেই মাঝের অনেকটা সময় অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু গান যেহেতু একা একাই সাধনা করা যায় তাই অব্যাহত আছে। পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার পর ৫/৬ টি নাটকে অভিনয় করেছি তবে ভিউ এর স্রোতে গা ভাসাতে চাইনা। মানুষের মনে জায়গা করে নেয়ার মতো কোন চরিত্র পেলে অবশ্যই অভিনয় করবো নয়তো গানটাই চালিয়ে যাবো, পাশাপাশি লেখাপড়া।

তাদের একমাত্র মেয়ে

মেলিতা মেহজাবিন অর্পা, সে এখন কিশোরী মে মাসের ১১ তারিখ অসংখ্য পাখির মাঝে তার জন্ম। এ প্রসঙ্গে অর্পার বাবা জানায়, অর্পার যখন জন্ম হয় তখন ক্লিনিকের আশেপাশে ও বাসায় নিয়ে আসি কেন যেন বাসার চারিপাশে অসংখ্য পাখির কিচির-মিচিরে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছিল। ঢাকা শহরে সাধারণত খুব একটা পাখির দেখা পাওয়া যায় না। কেন এটি ঘটেছিলো তার রহস্য আজো উম্মোচিত হয়নি। অর্পার এখন ১৮ বছর। অর্পাও শৈশব থেকেই অভিনয় শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত। শিশু শিল্পী হিসেবে এরই মাঝে অর্ধশতক নাটকে অভিনয় করেছে। ৩টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছে। ১ টিতে শিশু শিল্পী হিসেবে ২ টিতে কিশোরী হিসেবে। কিন্তু প্রত্যেকটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে। যেমন-শামীম আকতার পরিচালিত ‘মেঘনার একাত্তর’ চলচ্চিত্রে মেঘনা চরিত্রে। শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘ফ্রম বাংলাদেশ’, বিপ্লব হায়দার’র ‘আলী’ দুটি সিনেমাই রিলিজের অপেক্ষায়। এছাড়া শর্ট ফিল্ম ‘পর্দা’, ওয়েবফিল্ম ‘বুমেরাং’ অর্পা এখন দ্বাদশ শ্রেনীতে অধ্যায়নরত। তার ইচ্ছে অভিনয়ের পাশাপাশি ফ্যাশন ডিজাইনিং এ বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া। কারন তার ভাবনা হলো শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি প্রত্যেকটা মানুষের পোষাক সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। যত ফ্যাশনেবল বা সাধারণ পোষাকই হোক না কেন, কোন পরিবেশে একজন মানুষ কি পোষাক পরিধান করবে তা জানা যেমন রুচির পরিচায়ক পাশাপাশি তাতে তার শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্থান-কাল-পাত্র, আভিজাত্য ও স্বীয়মনন এর বহিঃপ্রকাশ।

সবশেষে বাবু বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি একজন শিশু বা কিশোর যদি শিল্প-সংস্কৃতি বা খেলাধুলায় মনোনিবেশ করে, তবে অপসংস্কৃতি বা ড্রাগের মত ভয়াল চর্চা থেকে দূরে থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *