ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট পাস
জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থ বৎসরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে; যা আগামীকাল ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ১৭তম, টানা ১২তম এবং বর্তমান মেয়াদের ২য় বাজেট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবদ্দশায় মাত্র তিনটি বাজেট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সে হিসেবে এটি আওয়ামী লীগের ২০তম বাজেট। দেশের ইতিহাসে এবারের বাজেট সবচেয়ে বড় বাজেট।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২০ পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা সর্বসম্মিতক্রমে পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সংসদ সদস্যরা এ সময় টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
এরআগে বেলা ১১ টায় একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশনের মুলতবি বৈঠকের শরুতে স্পিকার প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উপস্থাপন করেন। এরপর ২০২০-২১ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আনীত ছাটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একে একে অন্য মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে সে সকল প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
নতুন বাজেট পাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষে মঞ্জুরী দাবী উত্থাপন করেন।
মোট ৫৯টি মঞ্জুরী দাবি উত্থাপন ও পাসের পর আইন-প্রণয়ন কার্যাবলী অংশে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখে সমাপ্য অর্থবৎসরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হইতে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য আনীত একটি বিল [নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২০] উত্থাপনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। স্পিকার অনুমতি মঞ্জুর করার পর তিনি বিলটি উত্থাপন করেন। এরপর অর্থমন্ত্রী বিলটি অবিলম্বে বিবেচার জন্য গ্রহণ এবং পরে বিলটি পাসের প্রস্তাব করবেন। স্পিকার বিলটি পাসের জন্য ভোটে দিলে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
এর মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলো। আগামীকাল ১ জুলাই (বুধবার) থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ১০ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এরপরের দিন আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের শিরোনাম- ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন। এদিকে গতকাল (২৯ জুন) কিছু সংশোধনীসহ অর্থবিল পাস হয়।
বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ কৃষক, শ্রমিক, মজুর, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, বেদে, স্বাস্থ্যকর্মী, ভ্যান চালক, রিকশাওয়ালাসহ সকল পেশার মানুষ, পান দোকানি, চা দোকানি, মুদি দোকানি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, কুটির ও ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ী, সকল শ্রেণী ও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, যারা কষ্টে আছেন তাদের সবার জন্য এবারের বাজেট। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে সারা বিশ্ব একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। আমরাও এর থেকে পরিত্রাণ পাইনি। পৃথিবীর অর্থনৈতিক এলাকায় সময়টি একটি অস্বাভাবিক সময়। স্বাভাবিক সময় হলে মাননীয় সদস্যদের প্রস্তাব সমূহের অনেক কিছু বিবেচনা করতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গতকাল ২৯ জুন বাজেট আলোচনার সমাপণী ভাষনে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তার সরকারের দেয়া ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটকে কেউ কেউ উচ্চাভিলাষী বললেও সরকার এই বাজেটের সফল বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনও ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবো না। আমরা কখনও হতাশায় ভুগী না। আমরা সবসময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই। প্রধানমন্ত্রী আগামী বাজেটকে জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম আখ্যায়িত করে এই বাজেটের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আরো এগিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।