বরিশালে জমে উঠছে ডিঙি নৌকার হাট
বরিশাল ব্যুরো: বর্ষায় বিলাঞ্চলের বাসিন্দাদের চলাচল, জীবন জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। নৌকায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন বিলাঞ্চলের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী। বর্ষা মৌসুমে তাদের প্রধান চালিকা শক্তি নৌকা। ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলেই নৌকা তৈরির কারিগড়রা ব্যস্ত হয়ে পরেন। ক্রেতাদের চাহিদামত স্ত্রী, সন্তান নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে ছোট-বড় নৌকা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন নৌকা তৈরির কারিগড়রা।
সূত্রমতে, জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জেলার আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদীর বিলাঞ্চলের বৃহত জনগোষ্ঠী তাদের জীবন ধারন ও যাতায়াতের জন্য নৌকার উপর নির্ভরশীল থাকেন। এসময় তারা পরিবারের চাহিদাপূরনের জন্য গ্রামের খাল-বিলে জাল, চাই-বুচনা (মাছ ধরার ফাঁদ) ও বড়শি নিয়ে মাছ শিকারে নেমে পরেন। এক্ষেত্রে তাদের একমাত্র ভরসা ডিঙ্গি নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম আসলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। অপরদিকে বর্ষার কারণে ফসলী জমি কিংবা বসতবাড়ি নির্মাণ কাজ কমে যাওয়ায় অলস হয়ে পরেন কাঠমিস্ত্রীরা। তাদের এই অলস সময়ে নৌকা তৈরিতে লেগে পরেন তারা। গ্রাম ঘুরে অপেক্ষাকৃত কম দামের জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, কদম, রয়না ও আম কাঠ দিয়ে ঘরে বসেই স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কাঠমিস্ত্রীরা তৈরি করেন বিভিন্ন সাইজের নৌকা। যা বিক্রি করেন জেলার বিলাঞ্চল অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা, দুশুমীরহাট, রামানন্দেরআঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর, ত্রীমুখি, রামশীল, সাদুল্লাপুর, পীরের বাড়ী ও গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার হাটে। এরমধ্যে নৌকা বিক্রির সবচেয়ে বড় বাহাদুরপুর ও সাহেবের হাট। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন বসে নৌকা বিক্রির হাট। আগৈলঝাড়ার বারপাইকা গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর নকুল ঘরামী জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও স্বরূপকাঠি, বানারীপাড়া, উজিরপুর ও মাদারীপুর এলাকার ব্যবসায়ীরা বারপাইকা হাটে এসে নৌকা কিনে তাদের স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করেন। একেকটি নৌকা প্রকারভেদে দেড় হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে বর্ষার মধ্যেও নৌকা তৈরি তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
বাহাদুরপুর হাটে নৌকা ক্রয় করতে আসা সঞ্জয় বালা, শুকুমার রায়, জীবন বালা জানান, বর্ষা মৌসুমে গোÑখাদ্য সংগ্রহসহ চলাচলের জন্য আমাদের নৌকার প্রয়োজন হয়। দাম কিছুটা কম হওয়ায় প্রতিবছরই একটি করে ডিঙ্গি নৌকা ক্রয় করি। রাজিহার গ্রামের মৎস্য শিকারী কালা চাঁদ জয়ধর জানান, বর্ষাকালে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করি। তাই এবছরও বর্ষার শুরুতে পছন্দমত নৌকা ক্রয় করেছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মৎস্য শিকার কিংবা গো-খাদ্য সংগ্রহের জন্যই নয়। বিলাঞ্চলের বাসিন্দাদের এখন যাতায়তের একমাত্র পথ নৌকা। তাই বর্ষায় একদিকে যেমন নৌকা তৈরির কারিগড়দের আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে তেমনি বিলাঞ্চলবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থাও কিছুটা সহজ হয়েছে। ফলে ডিঙ্গি নৌকা কেনাবেচায় জমে উঠছে স্থানীয় হাট।