আপনাদের পায়ে ধরি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করেন -শিমুল খান
ঢাকাই সিনেমার খলভিনেতা শিমুল খান। অভিনয় করেছেন বহু সিনেমায় তবে বেশিরভাগ সিনেমায় দেখা গেছে মুখ্য খলভিনেতা হিসেবে। ইদানীং বিশেষ করে তাকে খুব কম সিনেমায় দেখা যায় এর কারণ হিসেবে দর্শান তিনি, মানহীন ছবিতে কাজ করে নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি করবেন না। যে কথা সে কথাই তিনি অটল। সম্প্রতি শিমুল খান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে একটি সিনেমা রিলেটেড স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। যেটি রাতারাতি সিনেমার গ্রুপগুলো ও সিনেমাবোদ্ধাদের আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণিত হয়। কি এমন লেখা ছিল সেটি? ডেইলি বাংলাদেশ টাইম এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো লেখাটি
ধরেন ৩০০ নয় সারাদেশে আমাদের মমতাময়ী মাননীয় সরকার ৬০০ টি স্টার সিনেপ্লেক্স মানের সিনেমা হল বানিয়ে দিলো। তারপর বলুন- সেখানে কোন সিনেমাগুলো কিংবা কোন নির্মাতাদের নির্মিত সিনেমা চালিয়ে হলগুলো বাঁচিয়ে কিংবা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন..?
দেখুন একটা সিনেমা হল বানিয়ে ছবি চালানো শুরু করে দিলেই হয়না। সেটা চালাতে বেশ ভাল রকমের খরচ হয়। এরপর লভ্যাংশের কথাও মাথায় রাখতে হয়। কারণ লাভ ছাড়া কোনো বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারেনা। কাজেই সেই সিনেমা হলগুলোতে উপস্থিত ২০২১ সালের বিশ্ব চলচ্চিত্রের সাথে পাল্লা দেয়ার মতো সিনেমা বানিয়ে প্রদর্শন করতে না পারলে কিন্তু এদেশের বড় শ্রেণীর দর্শকদের সিনেমা দেখার প্রশ্নই আসেনা।
কারণ এখন সামান্য রিকশাওয়ালা শ্রেণীও প্রত্যেকদিন শত-হাজার কোটি রুপীতে বানানো মারমার কাটাকাট তামিল-তেলেগু-কান্নাড়া এবং হিন্দি ভাষার সিনেমা দেখে অভ্যস্ত। আর একটু স্বচ্ছল শ্রেণীতো নেটফ্লিক্স, এ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি হটস্টার, এ্যাপল টিভি, এএলটি বালাজি এমনকি জি ফাইভের দূর্দান্ত মানসম্মত সব কনটেন্টে বুদ হয়ে আছে।
কাজেই সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সেই পরিমাণ পর্যাপ্ত মানসম্মত সিনেমা বানানোর জন্য কয়জন মানসম্মত নির্মাতা, লেখক এবং টেকনিশিয়ান এই মুহুর্তে এদেশে অবশিষ্ট আছে বলুনতো…??? দয়াকরে একটু জেনেশুনে এবং ভেবেচিন্তে উত্তর দিন। আমি জানি আপনি যদি আন্দাজে তর্ক করার মতো বেহুদা মানসিকতার মানুষ হন তাহলে নানারকম ভুইফোড় উত্তর দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৩০০ সিনেপ্লেক্স বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
কিন্তু আপনাদের সেই চেষ্টা সফল হলেও আদতে এইদেশের সিনেমার কোনো উন্নতিই হবেনা। গুমূত সেই গুমূতই থেকে যাবে। যদি না আমরা আবেগ বিসর্জন দিয়ে বাস্তববাদী হয়ে মগজ খাটিয়ে সুদূরপ্রসারী সঠিক চিন্তা করে ২০২১ পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রকৃত মাস্টারপ্ল্যান ডিজাইন না করেই অশিক্ষিত মূর্খের দিলের মতো সরকারের কাছে গিয়ে ভিক্ষুক সেজে হায়মাউ করে কেঁদে বাংলা সিনেমাকে বাঁচানোর জন্য ক্রমিক দয়া করতে বলি।
আপনাদের পায়ে ধরি। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করেন। চলচ্চিত্র হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং মেধাভিত্তিক মাধ্যম। আর মেধাবী এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের আত্মসম্মানটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। কাজেই এখানে আপনি যদি মেধা খাটিয়ে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে না পারেন তাহলে প্লিজ অযোগ্যতা নিয়ে অন্য পেশায় চলে যান। দরকার হয় পাশেই কারওয়ানবাজারে আলু পটল বিক্রি করুন। তবুও চলচ্চিত্রের মতো মহা বুদ্ধিবৃত্তিক জগতটাকে আপনাদের জঘন্যতম, নষ্ট এবং দূর্গন্ধযুক্ত রাহুগ্রাস থেকে মহামুক্তি দিন…
-শিমুল খান, চলচ্চিত্র অভিনেতা