মতামত

সামাজিক উন্নয়নে সমাজকর্মীদের গুরুত্ব

Share this:

সামাজিক এক জন দক্ষ সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করতে হলে প্রথমত প্রয়োজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান। সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক তথা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বেশ সমাদৃত একটি বিষয়। বাংলাদেশে সমাজকর্মের আবির্ভাব পঞ্চাশের দশকের শুরুতে হলেও বৈশ্বিকভাবে ১৮৯৮ সালে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পঠিত হয় সমাজকর্ম বা আধুনিক সমাজকল্যাণ। বিষয়বস্তু হিসেবে সমাজকর্ম যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত ও বৈচিত্র্যময়। কারণ সমাজকর্ম বিষয়টি শুধু সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ বিষয়ের সঙ্গে অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন, মনোবিজ্ঞান, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক জন সমাজকর্মী যে ইস্যু নিয়ে কাজ করবেন, সে ইস্যু নিয়ে ভালো ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে তিনি তার বৈজ্ঞানিক গবেষণানির্ভর জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারবেন সমস্যা সমাধানে। সমাজকর্মীর নীতিগত ও কর্মমুখী পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আরোপের মাধ্যমে একটি সমাজের ভিত্তিমূল তৈরি হয়।

আমাদের দেশের সামাজিক কাঠামো ব্যবস্থাপনায় এক জন সমাজকর্মীর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এক জন সমাজকর্মী তার অর্জিত প্রায়োগিক দক্ষতা দলমত নির্বিশেষে সমাজ, প্রশাসনে যথার্থভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। সমাজে উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি আনয়নে কাজ করেন পেশাদার সমাজকর্মীরা। সমাজকর্মীরা সমাজে কর্মমুখী পেশাদার মনোভাব তৈরি ও সমাজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা, কৃষি, অর্থনীতি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি খাতে বিশদ ভূমিকা পালন করতে পারেন। একটি সমাজের পরিপূর্ণ উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের সমন্বয় সাধন হয় পেশাদার সমাজকর্মীদের মাধ্যমে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে সমাজের সৃষ্ট বিভিন্ন মানবাধিকার ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সমাধান ও সংস্করণে পেশাদার সমাজকর্মীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, কলাকৌশল প্রয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র পায়। পেশাদার সমাজকর্মীরা এসব সমস্যা সমাধান করার ফলে সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নও বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমানে একটি সমাজ বা সম্প্রদায়ে সমাজকর্মীর প্রয়োজন লক্ষণীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে পেশাদার সমাজকর্মীর স্বীকৃতি নেই বিধায় আমাদের সমাজে বিভিন্ন সমস্যা দিন দিন উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েই চলছে যেমন—দারিদ্র্য, আত্মহত্যা, শিশু-কিশোর অপরাধ, নারী পাচার, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি। সামাজিক এ সমস্যা সমাধান ও কার্যকরে এক জন পেশাদার সমাজকর্মীর বিকল্প নেই। আমাদের দেশে পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগ করা হলে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবেও দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নয়ন হবে।

তাছাড়া আমাদের দেশে সমাজকর্ম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে যেমন—সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ইত্যাদি মন্ত্রণালয়গুলোতে সমাজকর্ম সম্বন্ধযুক্ত বিষয়ে স্নাতকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেশাদার সমাজকর্মীদের নিয়োগ প্রদান করা হলে আমাদের সমাজের সামাজিক উন্নয়ন বিকাশের পথ আরো সুগম হবে।

এমতাবস্থায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে সমাজের সুষ্ঠু সমস্যা সমাধান ও সমাজে উন্নয়নের পথ ত্বরান্বিত করতে উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগ, সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

লেখক, সমাজকর্মী ,ব্লগার, সাংবাদিক সোয়েব সিকদার (এলএলবি অনার্স এলএলএম .পিইউবি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *