জাতীয়সারাদেশ

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে নেয়া হচ্ছে নতুন ৬০ উন্নয়ন প্রকল্প

Share this:

করোনাকালে প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতের নাজুক অবস্থা। এমন অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য নেয়া হচ্ছে নতুন ৬০টি উন্নয়ন প্রকল্প। আর ওসব প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ১৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় সেগুলো যুক্ত করেছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব বিবেচনায় পুরো অর্থবছর জুড়ে ওই তালিকা থেকে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করে তা অনুমোদনের সুপারিশ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতের মোট ৬০টি প্রকল্পে মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১১টি প্রকল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ১৮টি প্রকল্প, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৯টি প্রকল্প, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫টি প্রকল্প, বাংলাদেশ পুলিশের ২টি প্রকল্প, কোস্টগার্ডের একটি প্রকল্প, মাদক দ্রব্য অধিদফতরের একটি প্রকল্প, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ সাব সেক্টরের ৩টি প্রকল্প রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১১টি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১২ হাজার ৭৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৯টি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ সাব সেক্টরের ৩টি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৮৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সেনাবাহিনীর ৫টি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তাছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের দুটি প্রকল্পের ব্যয় হবে এক হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা, কোস্টগার্ডের প্রকল্পে ব্যয় ১১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মাদক দ্রব্য অধিদফতরের একটি প্রকল্পের ব্যয় ১০২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তাছাড়াও, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ১৮টি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৯ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধিকতর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; ঢাকা শিশু হাসপাতাল সম্প্রসারণ-২, জেলা সদর হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসিইউ ও সিসিইউ স্থাপন প্রকল্প; বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপন; ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণ; ঢাকার মিরপুরের দারুস-সালামে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের ইউনিট-২ স্থাপন; হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন; চিকিৎসা সেবা ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন; চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; মুগদা মেডিক্যাল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সম্প্রসারণ; কোস্ট গার্ড ও স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনে (মংলা, বাগেরহাট) একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ; কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৭টি বিভাগীয় হাসপাতালের আধুনিকায়ন। তাছাড়া স্বাস্থ্য খাতের আরো কয়েকটি নতুন প্রকল্প হচ্ছে- সিএমএইচ, ঢাকা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন (তৃতীয় পর্যায়); ঢাকা সিএমএইচ-এ ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়); স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; পুরাতন মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত হোস্টেল নির্মাণ; কিরারানোকাই মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসাপাতাল; কুড়িগ্রাম স্থাপন; রংপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন; ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্যাল এ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন হাসপাতাল স্থাপন; রংপুর ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ সম্প্রসারণ; সিরাজগঞ্জ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল স্থাপন; ন্যাশনাল চিলড্রেন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ স্থাপন; সিলেট কিডনি হাসপাতাল স্থাপন এবং টাঙ্গাইল জেলায় একটি ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন; নোয়াখালী ন্যাশনাল হার্ট হাসপাতাল নির্মাণ; বরিশাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণ; জেলা পর্যায়ে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন প্রকল্প; খুলনা ও সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সম্প্রসারণ প্রকল্প।
সূত্র আরো জানায়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত না হলেও গুরুত্ব বিবেচনায় বিশেষভাবে ৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। যার দুটিই হলো করোনা মোকাবেলায়। সাধারণ ছুটির মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো পরে একনেকে অনুমোদন পায়। তারমধ্যে কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্প, যার ব্যয় ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি এ্যাসিস্টেন্স প্রকল্প, যার ব্যয় ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগামী অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হবে। মন্ত্রণালয় থেকে যেসব প্রকল্প পাঠানো হয়েছে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আসছে জুলাইয়ে পরিকল্পনা কমিশন থেকে ওসব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাই শেষে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলো আগে পর্যায়ক্রমে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রীও জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ এবং নতুন প্রকল্পে অনুমোদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ জানান, অনেক প্রকল্পই থাকে কিন্তু সবই বাস্তবায়ন হয় না। তবে মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ঠিক করলে এবং বরাদ্দ থাকলে পরিকল্পনা কমিশনকে জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *