আন্তর্জাতিক

অতিথি কর্মীদের ভিসা ও গ্রিন কার্ড স্থগিত : ট্রাম্প

Share this:

করোনা মহামারীর জেরে অর্থনৈতিক মন্দার মুখে ১ লাখ ৭০ হাজার ‘অতিথি কর্মী’ (গেস্ট ওয়ার্কার) বা বিদেশি কর্মীর (ফরেন ওয়ার্কাস) ভিসা ও গ্রিন কার্ড স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়ে চলতি বছরের (২০২০ সাল) শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ স্থগিতাদেশের আওতায় বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার ও এইউ পেয়ার ভিসার আওতায় থাকা কর্মীরাও থাকবেন। ওয়াশিংটন পোস্ট, পলিটিকো, দ্য ফাইনান্সিয়াল টাইমস ডটকম।

মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের ২৩ জুন মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, ২২ জুন সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া এমন পদক্ষেপের ফলে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত কর্মহীন প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষের চাকরিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এদিনের সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও জানান, এ পদক্ষেপটি মহামারীজনিত কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিনিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আপাতত চার ধরনের ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেগুলো হলোÑ এইচ-১ বি, এইচ ৪, এল-১ এবং জে ১ ভিসা। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে এইচ ১ বি-র ক্ষেত্রে লটারির চেয়ে যোগ্যতামানে জোর দিতে বলা হয়েছে। এদিকে করোনা মহামারীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী আইন কঠিন করে তুলছে বলে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সমালোচকরা। মার্কিন অভিবাসন দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ অর্থবর্ষে ১ লাখ ৩৩ হাজার বিদেশিকে এইচ-১ বি ভিসার অনুমোদন দেয়া হয়। এর বেশিরভাগই ভারত ও চীনের দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।

‘ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হলে দেশ বড় বিপদে পড়বে’ : অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘দেশের জন্য বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। আবার নির্বাচিত হলে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে উঠবেন বলেও সতর্ক করেছেন আগ্রাসী মার্কিন নীতির এই সমর্থক।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ ও ব্যক্তিগত স্বার্থ- এ দুয়ের পার্থক্য ট্রাম্প বোঝেন না। আর এটাই দেশের জন্য ‘সবচেয়ে বেশি বিপদ’র বলে উল্লেখ করেন বল্টন। ক্ষমতায় থাকা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে জনসম্মুখে এটিই তার উচ্চপদস্থ এক সাবেক সহযোগীর সবচেয়ে কড়া ও চুলচেরা বিশ্লেষণ ।

দেশটির প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করে জানিয়েছে, আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে করোনা মহামারীতে সোয়া লাখের মতো মানুষের প্রাণহানি, অর্থনৈতিক মন্দা ও টানা ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের মুখে কোণঠাসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কে গত রোববার রাতে মার্কিন টেলিভিশন এবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বল্টন এমন মন্তব্য করার পাশাপাশি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে দেশ আরও অধঃপতনে চলে যেতে পারে। যা হয়তো আর সামাল দিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। একজন রক্ষণশীল রিপাবলিকান হিসেবে উদ্বেগ প্রকাশ করে বল্টন বলেন, ‘নির্বাচনটা একবার হয়ে গেলে, তাতে যদি প্রেসিডেন্ট জয়ী হন, তাহলে তার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আর থাকবে না।’

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প আগামীতে ভোট নিয়ে আর রাজনৈতিক চাপে থাকবেন না। এছাড়াও বল্টনের মতে, ট্রাম্প এমন একজন নেতা, যিনি শুধু নিজের প্রয়োজনকেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। তিনি গণতন্ত্র বা মার্কিন সংবিধানও খুব ভালো করে বোঝেন না। এমনকি ট্রাম্পের কোনো দার্শনিক ভিত্তি, কৌশল কিংবা নীতি নেই। ফলে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে কি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে জানান বল্টন। এদিনের সাক্ষাৎকারে এবিসিকে বল্টন এও বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য নন। দেশ চালানোয় দক্ষতার অভাব রয়েছে তার। তিনি একজন রক্ষণশীল রিপাবলিকানও নন। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ‘প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই’ দেখে খুবই উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে বোল্টন বলেন, আমেরিকার জনগণের একথা জানা উচিত।

জন বল্টন সম্প্রতি তার স্মৃতিচারণমূলক বই ‘দ্য রুম হয়্যার ইট হ্যাপেনড’ এর প্রচারকাজে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। বিস্ফোরক এ বইটিতে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যোগ্যতার কঠোর মূল্যায়ন করেছেন। বল্টানের এসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিক অঙ্গনে ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকেও তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *