জাতীয়বরিশাল বিভাগসম্পাদকীয়সারাদেশ

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে ছৈলারচর

Share this:


মোহাম্মদ আলী বাবু, ছৈলারচর, ঝালকাঠী থেকে ফিরে : নদীর তীরে ৪১ একরের অধিক জমি নিয়ে জেগে ওঠা বিশাল চরে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মেছে প্রায় লক্ষাধিক ছৈলা গাছ । আর এ গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা চরের নামকরণ করা হয়েছে ছৈলারচর । প্রকৃতির নৈসর্গে সাজানো নয়নাভিরাম ছৈলারচর দিন দিন পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে । তাই লকডাউন শিথীলের পর থেকে প্রতিদিনই দেশের দূর-দূরান্তের পর্যটকদের ছৈলারচরে ভীড় বেড়ে চলেছে ।


পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সম্প্রতি ছৈলারচরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সেতু ও গোলঘর গত ১১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল । উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছৈলারচরে প্রবেশের আগে নির্মান করা হয়েছে ডিসি ইকোপার্ক । যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে ।


গত ১১ সেপ্টেম্বর দিনভর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মতো লাখো ছৈলা গাছে বিভিন্ন পাখি নীড় বেঁধেছে । পুরো চরজুড়ে বিচিত্র রকমের পাখির কলকাকলি পর্যটকদের মনছুঁয়ে যায় ছৈলা গাছ ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতের গাছকে ঘিরে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচর ।


তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছৈলার চরের বৃহত এলাকা এখন তলিয়ে রয়েছে । পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ছৈলারচরে নির্মান করা হয়েছে সু-বিশাল সেতু, একাধিক গোল ঘর, ওয়াশ রুম, বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ, শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি । শেষপর্যায়ে রয়েছে রেষ্ট হাউজ নির্মানের কাজ ।


স্থানীয় সংবাদকর্মী মোছাদ্দেক হাওলাদার ডেইলি বাংলাদেশ টাইমকে বলেন, বিশখালী নদীর বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছৈলারচরে বিগত সাত বছর ধরে প্রকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গাছপালা । যা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে । তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকে এ স্থানটি । দূরদূরান্ত থেকে এখানে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি পিকনিকের দল আসে । সরকারের সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে ছৈলারচর হতে পারে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র ।


উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির ডেইলি বাংলাদেশ টাইমকে বলেন, ছৈলারচর পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি । পর্যটনকে বিকশিত করার পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার । তাই এখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন করা হয়েছে । তিনি আরও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছৈলারচর হতে পারে একটি আধুনিক ও আর্ন্তজাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র ।


ছৈলারচরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে দিন-রাত কাজ করা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৪ সালে ছৈলারচরকে পর্যটন স্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করেছে উপজেলা প্রশাসন । ইতোমধ্যে ট্যুরিজম বোর্ড ছৈলারচর উন্নয়নের জন্য কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে । যা বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে । এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন করা হলে ছৈলার চরটি হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলে মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র ।


ডিসি ইকোপার্ক ॥ ছৈলারচরের প্রবেশের আগেই প্রায় পাঁচ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ডিসি ইকোপার্ক । কাঠালিয়ায় এই প্রথম একটি আধুনিক পার্ক নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে । ইতোমধ্যে প্রায় এক একর জমিতে খনন করা হয়েছে ডিসি লেক আর লেকের ওপর নির্মান করা হয়েছে সু-বিশাল সেতু ও গোলঘর । এছাড়া এখানে দেশি ও বিদেশী পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য নির্মান করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কটেজ ।

লেকজুড়ে তৈরি করা হবে সেতু, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকবে আধুনিক জলযান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে থাকবে মিনি চিড়িয়াখানা আর ছোটদের জন্য কিডস জোন । অতিসম্প্রতি ছৈলারচরে স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামাল হোসেন ও তার সহধর্মীনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৪ গুলশান আরা বেগম ডেইলি বাংলাদেশ টাইমকে বলেন, এখানে বেড়াতে এসে দীর্ঘদিন পর প্রকৃতির সাধ পেলাম । এতো মনোরম পরিবেশে পর্যটনের জন্য এর চেয়ে আর ভাল স্থান হয়না । এটা পর্যটন আয়ের উৎস হতে পারে বলে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে প্রচুর বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে ।


পর্যটক ইসরাত জাহান মিম বলেন, পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই । শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য যেতে হয় জেলা শহরের বাহিরে । ছৈলারচরের পাশাপাশি ডিসি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা পেলে পাল্টে যাবে এখানকার চিত্র । পার্কটি চালু হলে বৃদ্ধি পাবে রাজস্ব আয় ।


বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল বলেন, অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ছৈলারচর । পর্যটন ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা হবে । প্রকৃতিতে সাজানো ছৈলারচরের পরিচিতি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করা হবে ।

তিনি আরও বলেন, পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় ছৈলারচরকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে এখানে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করা হয়েছে । এছাড়া ট্যুরিজম বোর্ড থেকে ছৈলারচর উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব করা কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর বাস্তবায়িত হলে ছৈলার চরটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে ।

মোহাম্মদ আলী বাবু, সম্পাদক ও প্রকাশক, ডেইলি বাংলাদেশ টাইম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *