সেই জল্লাদ শাহজাহান আর নেই…
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিসহ ৪০ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জল্লাদ শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন আমার ভাই। রোববার (২৩ জুন) রাতে তার বুকে ব্যাথা উঠে। পরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
ফিরোজা বেগম বলেন, এদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে তার মরদেহ গ্রহণ করেছি আমি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শাহজাহানের মরদেহ নরসিংদির পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।

জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে তিনি। তার মায়ের নাম মেহের। তিন বোনের মধ্যে বর্তমানে এক বোন বেঁচে আছেন।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। যৌবনকালসহ জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই সংসার টেকেনি। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন।
দীর্ঘ ৪৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন মুক্তি পান শাহজাহান। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি দিন কারাভোগের রেকর্ড এটি। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জন্মগ্রহণ করলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় পরাধীন জীবনযাপন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় তার ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছর মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য জেল দেয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে নেমে আসে। দুটি মামলায় ৫০০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৪৪ বছর পর মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান।
ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শাহজাহান। অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করেন তিনি। ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ।
সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন শাহজাহান। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন। এক সময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা
সেন্ট্রাল কারাগারে আসেন। সেখানে প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পান তিনি।
কারাগারের নথি অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ৬ ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), চার যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপিনেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির এবং ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ৪০ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন শাহজাহান।
সৌজন্য – ভোরের কাগজ