কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকার সড়ক
বরগুনার পাথরঘাটায় ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা। সদ্যনির্মিত এ সড়কটির কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পিচঢালাই রাস্তাটির দুই পাশ দিয়ে ভেঙে গেছে। পাথরঘাটা এলজিইডির কর্মকর্তা বলছেন, রাস্তাটি এখনো আমাদের কাছে হস্তান্তর করেনি ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়ম পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে হরিনঘাটা ইকোপার্কের আগে জাফরের দোকান নামক স্থান পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে গত তিন মাস আগে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাস্তার পিচঢালাই উঠে ইট-সুড়কি সরে রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে এই এলাকার যানবাহন চলাচল করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পাথরঘাটা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার দেওয়া হয়। এলজিইডির এই কাজটি করতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫২৫ টাকা। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ নামে এক ঠিকাদার কাজটি পান। সেখান থেকে সাব কন্ট্রাকের মাধ্যমে কাজের দায়িত্ব দেন বরগুনার দুই ঠিকাদার শাহিন ও শহিদুল ইসলাম মৃর্ধাকে।
কাজের শুরু থেকেই এ সড়কটি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। তবে এলাকার কিছু প্রভাবশালীর চাপে স্থানীয়রা কিছু করতে পারেনি। এই অনিয়মের কারণে এখন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে এলাকাবাসীকে।
স্থানীয়রা জানান, নিম্নমানের খোয়া দিয়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা ছিল রাস্তার কাজ। এ সময় ঠিকাদাররা চুলার মাটির মতো নরম ইট-সুড়কি ব্যাবহার করেছে। পরে বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে তরিগরি করে কাজ শেষ করে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার মজিবুর রহমানসহ স্থানীয় আলমগীর হোসেন, দুলাল মিয়া, জাহাঙ্গীর ও ডালিম জানান, আগেরবারও নিম্নমানের খোয়া ও বালু দিয়ে এ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন অনেক জায়গা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে অতিষ্ঠ হয়েছিল এই এলাকার মানুষ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর রাস্তাটি নতুন করে হতে দেখে অনেকেই ভেবেছিল এই বুঝি কষ্টের দিন শেষ। কিন্তু মাত্র তিন মাসের ব্যাবধানে রাস্তার দুই পাশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে। এবার কষ্ট যেন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলজিইডির পাথরঘাটা উপজেলা প্রকৌশলি চন্দন কুমার চক্রবতী, উপসহকারী প্রকৌশলি আবুল বাশারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যার ফলে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই রাস্তাটি ভেঙে গেছে।
রাস্তা নির্মাণের অনিয়ম নিয়ে বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ ভেঙে ৯ বরযাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার সেই ব্রিজটিও এই সাব-কন্টাক্টর শহিদুল ইসলাম মৃর্ধা অনিয়ম করে নির্মাণ করেছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারের প্রধান সাব-কন্ট্রাক্টর মোহাম্মদ শাহিনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল বন্ধ করে দেন।
সড়ক নির্মাণের সময় অভিযোগের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলাম মৃর্ধা কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন, সিডিউল মেনেই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা এলজিডির উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমাদের কাছে এখনো কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত মাটি না দেওয়ায় দুই পাশ ভেঙে গেছে।
তিনি জানান, রাস্তা হ্যান্ডওভারের আগ পর্যন্ত রাস্তার সকল দায়ভার ঠিকাদারের। তারা রাস্তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা জানান, সড়ক নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এই বিষয়টি পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রকৌশলীকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত না করা পর্যন্ত ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ না করতে বলা হয়েছে।