ঢাকা বিভাগ

নিষিদ্ধ সময়ে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে জাটকা

Share this:

(শরীয়তপুর প্রতিনিধি ,কামাল হাসান) -সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শরীয়তপুরের পদ্মা নদীতে জাটকা ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে। এসব জাটকা আবার অবাধে বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও মৎস্য বিভাগের তেমন কোনো অভিযান নেই। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সচেতন জেলেরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দেবে। এতে জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দেবে। একসময় আমাদের নদী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক এই রুপালি ইলিশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলায় নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে জাটকা ইলিশ ধরছেন। এসব জাটকা ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, দুলারচর নতুন বাজার,মনাই হাওলাদার বাজার, ছুরির চর, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, মাল বাজার, কুবুদ্ধির ঘাট, বন্দুছি বাজার, নুরুদ্দি বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। নড়ীয়া উপজেলার সুরেশ্বর বাংলা বাজার, চরআত্রা নওপাড়া। গোসাইরহাট উপজেলার খেজুরতলা, কোদালপুর লঞ্চঘাট, কুচাইপট্টি বটতলা, জলালপুর টেকপার, মেহেরজানের টেক, ঈশানবালা। ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা, কাইলারা, শিধলকুড়া, ধানকাটি। জাজিরা উপজেলার সিডার চর, কুন্ডের চর, বড়কান্দিসহ বড় বড় মৎস্য ঘাটে প্রকাশ্যে ডাকে বিক্রিও করা হচ্ছে। এসব ঘাট থেকে জাটকা কিনে শরীয়তপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলেরা বলেন, ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা না থাকায় এসব হচ্ছে। আবার সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেক জেলে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ও আইনের কথা জানেন না।

চন্ডীপুর এলাকার জেলে কালাম খান বলেন, আমরা প্রতি দিনই নদীতে মাছ ধরছি। বড় মাছের আশায় নদীতে জাল ফেলি। জালে জাটকা ধরা পড়ে। আমরা তো বড় মাছের জন্য জাল ফেলি, কিন্তু এ এলাকায় হাজার হাজার জেলে রয়েছে যারা কারেন্ট জাল দিয়ে শুধু জাটকা ধরছেন। মৎস্য কর্মকর্তারা এখানে আসেন না। আমাদের বাজারে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি হয় কেউ কিছু বলে না। সাধারণ মানুষ নিরাপদে এসব মাছ কিনছে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন হতে হয় না।

নাও ডবা এলাকার জেলে হাসান শেখ বলেন, গত মা ইলিশের অভিযানের পর থেকে নদীতে তেমন কোনো ইলিশ পাইনি। অনেক ধার-দেনা ও ঋণে জর্জরিত আছি। নদীতে বড় মাছও নেই। তাই নদীতে যে মাছ পাই তাই ধরি। আমাদের কোনো জেলে নিবন্ধন নেই। এছাড়াও জাটকা আইন সম্পর্কে কেউ আমাদের কখনো বলেনি। তাই আমাদের কোনো ধারণাও নেই।

ছুরিরচর এলাকার কয়েকজন মাছ বিক্রেতা বলেন, জেলেরা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট ছোট জাটকা ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। আমরা বাধ্য হয়ে তা কিনে নিচ্ছি। কারণ জেলেদের কাছে আমাদের দাদন দেওয়া রয়েছে। প্রশাসনের অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রশাসন আসে না কারণ আমরা থানা, নৌ-পুলিশ, মৎস্য অফিসকে প্রতি সপ্তাহে টাকা দেই। এছাড়াও কিছু আড়তদার গোপনে জেলেদের জাটকার জন্য দাদনে টাকা দিয়ে রাখে, যাতে করে ওই জেলেরা শুধু তাদের কাছেই জাটকা বিক্রি করতে বাধ্য থাকে।

দুলার চর এলাকার একাধিক জেলে বলেন, অসাধু জেলেরা সরকারি কোনো আইন না মেনে কারেন্ট জাট দিয়ে জাটকা ধরছে। তা আবার মৎস্য ঘাট, হাট-বাজার ও ঢাকার আড়তদারদের কাছে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু জাটকা মাছ আটক করা হলেও এর সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের ধরতে তেমন কোনো অভিযান চালাচ্ছে না প্রশাসন। এতে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশের মহাসংকট দেখা দিবে। জেলে পল্লীতে মারাত্মক অভাব দেখা দিবে। তাই আমরা সরকারের কাছে এসব জাটক শিকার ও বিক্রি বন্ধের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করছি।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারে নিচে ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি, বাজার জাতের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অথচ এ আইন মানছেন না অসাধু জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান জানান, মৎস্য বিভাগ কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়াও তারা পৃথক অভিযানও চালাচ্ছেন। তবে জনবল ও নৌযান সংকটের কারণে তারা পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *