মৃত্যুর আগে ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি’ চেয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস
(জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ,সোয়েব সিকদার )-বিশ্ববাসীর ভালোবাসা পাওয়া ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস আর নেই। স্থানীয় সময় সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে ভ্যাটিকানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মানবিক নেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
তবে মৃত্যুর আগমুহূর্তেও তিনি উচ্চারণ করে গেছেন শান্তির কথা—ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘যুদ্ধ থামাও, জিম্মিদের মুক্ত করো, শান্তির পথে এগিয়ে চলো।’
ইস্টার সানডের আগের দিন, হাসপাতাল থেকে সদ্য ফিরে আসা অসুস্থ পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে ‘উরবি এট অরবি’ আশীর্বাদ পাঠ করেন। এই সময়ই তিনি গাজার মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও তিনি ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা যেন ভুলে না যাই—মানবতা রক্ষা করার চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই। পোপ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে বলেন এবং ইসরায়েলকেও ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
এদিকে ভ্যাটিকানের কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল জানান, সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে রোমের বিশপ পোপ ফ্রান্সিস ‘প্রভুর ঘরে ফিরে গেছেন’। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি মানুষের সেবা ও শান্তির বাণী প্রচারে অটল ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তরুণ বয়সে একটি ফুসফুস অপসারণের পর থেকে নানা শারীরিক জটিলতার মধ্যেই তিনি ১২ বছর ধরে ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩৮ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। সেখানেও তার উদ্বেগের কেন্দ্রে ছিল গাজার মানুষের দুর্ভোগ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে আর্জেন্টিনার হোর্হে মারিও বারগোলিও পোপ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বুঝিয়ে দেন—এবার পোপ হবে ভিন্নধর্মী। তার প্রথম কথাই ছিল ‘বুয়োনাসেরা’—শুভ সন্ধ্যা। সাধারণ মানুষ, দরিদ্র, শরণার্থী, সংখ্যালঘু—সবার জন্যই তিনি ছিলেন আশ্রয়দাতা।
পুঁজিবাদের কঠোর সমালোচক, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সোচ্চার এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীল মনোভাবের কারণে রক্ষণশীলদের সমালোচনার মুখেও পড়েছেন। তবে তাতে থেমে যাননি। তিনি বরাবরই বলতেন, ধর্ম মানে কাঁটা নয়, আশ্রয় হওয়া উচিত।
বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসে কাঁপছে, তখন ফাঁকা স্কয়ারে দাঁড়িয়ে পোপ বলেছিলেন, আমরা সবাই একই নৌকায় আছি, দুর্বল ও বিভ্রান্ত। এখনই সময়, একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর। এই বার্তা বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। পোপ এই ঘটনাকে গণহত্যার শামিল বলে মনে করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, গাজার শিশুদের কান্না শুনতে পাচ্ছেন? শান্তি চাই তাদের জন্য, ক্ষমা নয় যুদ্ধবাজদের জন্য। পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন কেবল ধর্মীয় নেতা নন—তিনি ছিলেন মানবতার কণ্ঠস্বর। জীবনের শেষ মুহূর্তেও তিনি যেন একটিই কথা বলে গেলেন—‘যুদ্ধ নয়, শান্তি’।