দেশীয় নৃত্য পরিচালকরা বাজেট চাইলে আর বাজেট থাকেনা – মনজুর আহমেদ
(সিনিয়র রিপোর্টার,শোয়েব সিকদার)-১৯৯৬ সাল তখন, ইলিয়াস কাঞ্চন , সালমান শাহ, ওমর সানি ,আমিন খানদের দাপুটে সময় চলছিল।সিনেমার প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি )তে রমরমা সিনেমার ব্যবসা এবং সারা এফডিসিজুড়ে সিনেমার শুটিং ,কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ নেই ক্যামেরার জন্য।
এক কিশোর তখন আসেন সিনেমায় নায়ক-নায়কদের সাথে নৃত্য করার জন্য।বিক্ষোভ, সত্যের মৃত্যু নেই ,আঞ্জুমান ছবি ‘তে নৃত্য করলেন।নাচ শেখার গুরু এবং সিনেমায় কাজ দিয়ে বসলেন তৎকালীন নৃত্য পরিচালক আমান।এরপরে কাজের উৎসাহ দিতে লাগলেন নৃত্য পরিচালক বেলাল মোসলেমও।ব্যাকগ্রাউন্ড নাচানাচি তো অনেক হলো এবার সহকারী নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ পেলেন নৃত্য পরিচালক জাকির হোসেনের কাছ থেকে সময়টা তখন ২০০৪ বা ২০০৫ ,বলা যায় প্রথম ওস্তাদ জাকির হোসেনই।কাজের চাপ তখন মাথার উপরে এরপরে হাত দিলেন মাথায় জনপ্রিয় নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল।সময়টা তখন ২০০৭ এর পর।এরপরে এখন পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিনেমা এবং মিউজিক ভিডিওতেও।এতক্ষন বলছিলাম সহকারী পরিচালনার হাতে ১৫০ ছবি এবং মিউজিক ভিডিওতে পরিচালনায় হাফ সেঞ্চুরির পথে যিনি ও বাংলাদেশের সকল নির্মাতা নায়ক নায়িকাদের সাথে কাজ করার বর্তমান সময়ের ব্যস্ত কোরিওগ্রাফার ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নৃত্য পরিচালক মনজুর আহমেদ এর কথা।

তিনি ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরার যুগ থেকে ডিজিটাল সময়ের সিনেমা পর্যন্ত বহুত রতবদল হতে দেখেছেন চোখের সামনে।তিনি বলেন -একটা সময়ে এফডিসিতে পা রাখার জায়গা ছিল না সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ,আমরা শুটিং ডাবিং করার জন্য ফ্লোর এডিট রুম পেতাম না ,বিভিন্ন মনোরম স্থানগুলোতেও ছিল মেলার ভিড়,আহারে সেইদিন এখন কোথায় ?!সেই সিনেমা কোথায় ?সেই নায়ক-নায়িকা কোথায় ,এবং নির্মাতা প্রযোজক এবং নৃত্য পরিচালকরা কই হারিয়ে গেলেন ? তার সঠিক ব্যাখ্যা কেউ হয়তো দিতে পারবে না।সিনেমার সুদিন দেখেছি কিন্তু সিনেমার দুর্দিনও যে দেখতে হবে তা ভাবতে পারেনি।যদিও আমিও সকলের মতো বিশ্বাস করি যে ,সিনেমার সুদিন ফিরতে আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।সম্মেলিত প্রচেষ্টা, সকলের দলবদ্ধতা ও এই সিনেমা ঘর এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

এখন ঘরে ঘরে নৃত্য পরিচালক এবং অনেক নির্মাতা বাহির থেকে নৃত্য পরিচালক নিয়ে আসে এই প্রসঙ্গে তিনি মনজুর আহমেদ বলেন –পৃথিবীর সকল নৃত্য পরিচালক একঘনে জন্ম নেয়নি তবে সব নৃত্য পরিচালক কিন্তু নৃত্য-ই করেন বা পরিচালনা করেন এর বাহিরে কিন্তু নয়।তবে হ্যা সবার কাজের ভিন্নতা থাকে যেমনটা আমাদেরও আছে কিন্তু সেটা কেউ দেখতে চায়নি একবারও।আমি শ্রদ্ধার সাথেই কথাটা বলছি .এই যে পাশের দেশ থেকে লোক নিয়ে এসে কাজের বাহবা দেখাচ্ছে এটাও আমরা করতে পারি। বাহিরের একটি লোককে যেভাবে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে এটাতো আমাদের দিচ্ছে না ,আমাদের দেক আমরাও দেশের নৃত্য পরিচালকরা যারা আছি, সেটা করে দেখাবো।আসল কথা হচ্ছে আমাদের ঠিক মতো বাজেট দিলে এবং কাজটি করার জন্য একটু সময় দিলে ,ভাবনা করে ভালো একটি কাজ বের করে দিতে এতটাও সময় ক্ষুন্ন হবেনা তাতে।ভালো বাজেট হলে, গান হবে দেখার মতো-আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম এটা। ইন্ডিয়া থেকে নৃত্য পরিচালক এনে কেন কাজ করাতে হবে? দেশে অনেক ভালো ভালো টেকনিশিয়ান আছে তাদের চোখে পরেনা? পরবে কেন? তারা তো অনেস্ট এবং টাকা পয়সা খেতে দিতে পারেনা তাই।

ঘরে ঘরে নৃত্য পরিচালক থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন -এখন যে নাচতে পারে সেও নৃত্য পরিচালক হয়ে যাচ্ছে।আমরা যখন ৯০ দশকের মাঝে ইত্যাদিতে কাজ করতাম তখন
হানিফ সংকেত দা আমাদের গান দিতেন .আমরা দেখতাম এখানে চার পাঁচ এঙ্গেল থেকে বিভিন্ন রকমের শট নিতেন একজন নৃত্য পরিচালক পরবর্তীতে কমপ্লিট করে দিতেন।আর এখন তো যে কেউ নৃত্য পরিচালক বনে যাচ্ছেন,আসলে হাতেগোনা কয়েকজন নৃত্য পরিচালক আছেন যারা গান বোঝেন এবং বোঝেন কোন গান কেমন হবে নাচের সাথে কেমন যাবে নায়ক নায়িকারা ও ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্টরা।

বর্তমান ব্যস্ততার প্রসঙ্গ টেনে মনজুর আহমেদ বলেন, আমি এখনো ইউকে থাকি। দেশের অবস্থা ভালো না তাই বাংলাদেশে কাজ করা সম্ভব না এখন। তাছাড়া আমি যখন দেশে নাচের স্কুল দিয়েছিলাম অনেক হুজুর নেতারা আমাকে হুমকি ধামকি দিয়েছিল যা কখনো ভুলবো না। দেশের চলচ্চিত্রের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল আমার কিন্তু এই দেশীয় মৌলবাদীদের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করা সম্ভব না। বাংলাদেশে আমার জীবন সংশয় আছে তাই ইউকে তে ভালো আছি এখানে স্বাধীনতা আছে কাজের জন্য। ইউকে’র আইন এবং মানুষ ও সাংস্কৃতিক এর প্রেমে পরে গেছি।
উল্লেখ্য ,পোড়ামন ,আমার চ্যালেঞ্জ ,রাজাবাবু,আরো ভালোবাসবো তোমায় ,শুটার,আকাশ ছোয়া ভালোবাসা,হিরো দা সুপারস্টার,হৃদয়ের কথা,অন্তর জ্বালা,হিট ম্যান ,খোদার পরে মা ,পাঙ্কু জামাই ছবিগুলোতে তিনি সহকারী নৃত্য পরিচালক হিসাবে কাজ করে বেশ সারা পেয়েছেন।