প্রথমবারের মতো ‘সানড্যান্স ইনস্টিটিউট ফিল্মমেকারস ফান্ড’ ঘোষণা, নির্বাচিত ১০টি সিনেমা প্রকল্প
(জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ,সোয়েব সিকদার)-চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি অভিনেতা রবার্ট রেডফোর্ড প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংস্থা সানড্যান্স ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে নতুন উদ্যোগ — ‘সানড্যান্স ইনস্টিটিউট ফিল্মমেকারস ফান্ড’। এই ফান্ডের আওতায় প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছে ১০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রকল্প, যেগুলোর স্রষ্টারা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছেন।
ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, নির্বাচিত শিল্পীদের মধ্যে মোট ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করা হবে। এই প্রকল্পগুলো এসেছে সানড্যান্স ইনস্টিটিউটের ছয়টি ভিন্ন প্রোগ্রাম থেকে— ফিচার ফিল্ম প্রোগ্রাম, ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রোগ্রাম, ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রাম, ক্যাটালিস্ট, আর্টিস্ট এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম এবং ইগনাইট।
এই ফান্ড মূলত ইনস্টিটিউটের আর্টিস্ট এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম-এর অংশ, যার লক্ষ্য সারা বছরব্যাপী ফেলোশিপ, অর্থায়ন এবং মেন্টরশিপের মাধ্যমে উদীয়মান চলচ্চিত্রশিল্পীদের বিকাশে সহায়তা করা।
সানড্যান্স ইনস্টিটিউটের আর্টিস্ট এক্সিলারেটর ও উইমেন অ্যাট সানড্যান্স ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক হাজনাল মলনার-সজাকাচ বলেন—
“আমরা আনন্দের সঙ্গে ২০২৫ সালের প্রথম অনুদানপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করছি। এই অংশীদারিত্ব শিল্পীদের সাহসী ও সৃজনশীল ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। তাদের গল্পগুলো বৈচিত্র্যময়, উদ্ভাবনী এবং গভীরভাবে মানবিক— যা সানড্যান্সের চেতনার প্রতিফলন।”
অনুদানপ্রাপ্ত ১০টি চলচ্চিত্র প্রকল্প এক নজরে
১. উই অ্যারাইভ উইথ ফায়ার (We Arrive With Fire)
সহ-পরিচালক: রনি জো ড্র্যাপার ও মারিসা লিলা কংগাও — যুক্তরাষ্ট্র
ইউরক জনগোষ্ঠী প্রাচীনকাল থেকে ভূমি রক্ষায় আগুন ব্যবহার করত। উপনিবেশ স্থাপনকারীদের নিষেধাজ্ঞার পর সেই প্রথা বিলুপ্ত হলেও আজ তারা আবার প্রকৃতি ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে আগুনের ভাষা ফিরিয়ে আনছে।
২. ফরোয়ার্ড (Forward)
পরিচালক: ক্রিস গ্রিস — যুক্তরাষ্ট্র
হ্যাম্পটনের শ্রমজীবী এলাকায় বসবাসরত লাতিনা কিশোরী আনা রহস্যময়ী বেলা’র প্রেমে পড়ে। রোলার-স্কেটিং আর গ্রীষ্মের রাতের উচ্ছ্বাসে জড়িয়ে পড়ে প্রেম, পরিচয় ও আত্মঅন্বেষণের এক গল্পে।
৩. হাই স্টিল (High Steel)
লেখক-পরিচালক: কাওয়েন্নাহেরে ডেভেরি জ্যাকবস — কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র
এক মোহক শ্রমিক পরিবারসহ নিউইয়র্ক ও রিজার্ভেশনের মধ্যে দ্বৈত জীবন যাপন করে। কিন্তু এক তরুণ ফটোগ্রাফারের প্রেমে পড়লে তার আত্মপরিচয় ও অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে।
৪. ভ্যালি অব দ্য টল গ্রাস (Valley of the Tall Grass)
লেখক-পরিচালক: মাসামি কাওয়াই — যুক্তরাষ্ট্র
একটি পুরনো টিভি/ভিসিআর সেট বিভিন্ন আদিবাসী পরিবারের ঘরে ঘুরে বেড়ায়, আর তাদের জীবন ও স্মৃতিকে একসূত্রে বেঁধে দেয়।
৫. অ্যালিয়েন ন্যাশন (Alien Nation)
লেখক-পরিচালক: খাওলা হায়দার মালিক — যুক্তরাষ্ট্র
এক পাকিস্তানি অভিবাসী দম্পতি অবসরের পর রহস্যময় আকাশের আলো খুঁজতে যাত্রা শুরু করে। সেই অভিযানে তারা আবিষ্কার করে দাম্পত্যের দূরত্ব ও অভিবাসী জীবনের অর্থ।
৬. এভরিথিং মাস্ট গো (Everything Must Go)
লেখক-পরিচালক: ম্যাকি মালিসন — যুক্তরাষ্ট্র
উদ্বেগ, স্বপ্ন ও বাস্তবতার টানাপোড়েনে জাপানি-আমেরিকান এক পরিবার মৃত্যুপথযাত্রী মাতৃতন্ত্রকে বিদায় জানাতে সংগ্রাম করে।
৭. জারিপিও (Jaripio)
সহ-পরিচালক: এফ্রাইন মজিকা ও রেবেকা জোয়েইগ — মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র
মেক্সিকোর মিচোয়াকান প্রদেশের রোডিও সংস্কৃতির পুরুষতান্ত্রিক আবরণের নিচে লুকিয়ে আছে এক নিষিদ্ধ সমকামী সম্পর্কের গল্প।
৮. ব্ল্যাকড আউট ড্রিমস (Blacked Out Dreams)
প্রযোজক: স্টিভ পারগেট — যুক্তরাষ্ট্র
ফ্লিন্ট শহরের প্রান্তিক অঞ্চলে তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরের বেড়ে ওঠা, যেখানে তারা শিক্ষা, ভালোবাসা ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন খুঁজে ফেরে।
৯. হোম অব দ্য বার্ডস (Home of the Birds)
লেখক-পরিচালক: হুদা রাজ্জাক — যুক্তরাষ্ট্র
১৯৬৩ সালের ইরাকের পটভূমিতে এক ছোট্ট নাইটিঙ্গেল পাখি ও তার উড়তে অক্ষম দাদু এক মানব পরিবারের সঙ্গে রোমাঞ্চকর অভিযানে বের হয়— হারানো পরিবারকে খুঁজতে।
১০. ইফ আই গো উইল দে মিস মি (If I Go Will They Miss Me)
লেখক-পরিচালক: ওয়াল্টার থম্পসন-হার্নান্দেজ — যুক্তরাষ্ট্র
লস অ্যাঞ্জেলেসের এক কিশোর তার দূরবর্তী বাবার সন্ধানে গিয়ে অদ্ভুত দর্শনে আক্রান্ত হয়— যেখানে সে দেখতে পায় নিজের সম্প্রদায়ের নিখোঁজ কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরদের আত্মা।
বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবনের সংলাপ
সানড্যান্স ইনস্টিটিউটের এই নতুন ফান্ড বিশ্বব্যাপী উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য এক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম, যা অর্থায়ন, পরামর্শ ও সৃজনশীল স্বাধীনতার মাধ্যমে নতুন গল্প বলার সুযোগ তৈরি করছে।
ইনস্টিটিউটের মতে, নির্বাচিত এই ১০টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ব চলচ্চিত্রে বৈচিত্র্য, মানবিকতা ও শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

