তারুণ্যের বিজয় ভাবনা
আজ মহান বিজয় দিবস। যে বিজয়ের জন্য সাত কোটি বাঙালিকে বেছে নিতে হয়েছিল সংগ্রামের পথ, যে লাল সবুজ পতাকা অর্জিত হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, যে মানচিত্রের জন্য সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে দুই লাখ মা-বোনকে, সেই বিজয়ের মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদের। একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে তরুণদেরই। বিজয়ের এত বছর পর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে কী ভাবছে তারা।
দেশকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন কী আমরা কিছুদিন আগেই পালন করলাম স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। এবার পৌঁছে গেলাম বিজয়ের পঞ্চাশের কোঠায়। লাখো শহীদের বিনিময়ের নাম বাংলাদেশ। বরাবরের মতোই দেশের বড় ভূমিকায় তারুণ্য। দেশের প্রতি তরুণদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। যুব সমাজে চাই সচেতনতা, হতে হবে উদ্যমী।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে বিজয় দিবস নিয়ে জানা গেল এখনকার তরুণদের ভাবনা ও মত।বাংলাদেশ ও বিজয়ের পঞ্চাশ নিয়ে কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী তাদের ভাবনা, তাদের মতামত জানান।
নোয়াখালী প্যারামেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার মাতৃভূমিকে নিয়ে আমি বরাবরই অত্যন্ত আশাবাদী। নাই নাইয়ের দেশ বলতে পারি। ছোট্ট এই দেশে কতকিছুই নাই, কতকিছুরই সঙ্কট। তবে আমরা দিন দিন যে এগিয়ে যাচ্ছি তা কিন্তু অস্বীকার করার মতো না। আমি স্বপ্ন দেখি আগামীর সাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি সেটার মর্যাদা রক্ষা করার পাশাপাশি প্রিয় স্বদেশকে কিছু যেন দিয়ে যেতে পারি নিজের কাছে নিজে এই প্রতিজ্ঞাই করছি’।
কাজিপুরের আলহাজ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ আবির হোসাইন বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো একদল মুক্তিকামী মানুষ। শোষকের ছায়া নেমে এসেছিলো বাংলাদেশ জুড়ে। আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়েছে আমাদের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় আমাদের এই দেশটি। দেখতে দেখতে ২০২১ অর্থাৎ ৫০ বছরে পদার্পন করলো আমাদের এই মাতৃভূমি। এই ৫০ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দরিদ্র বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে’।
গাজীপুর খান মডেল স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী ইসমোম আহমেদ শাকিল বলেন, ‘স্বাধীনতা কেবলই একটা শব্দ নয় বা নয় কোন আবেগ; এর সঙ্গে জুড়ে আছে একটি জাতির ভবিষ্যৎ। স্বাধীনতা যদিও জন্মগত অধিকার কিন্তু জন্মের পর নানা কারণে সে স্বাধীনতা হরণ হয়। খাঁচায় থাকা পাখির থেকে আমরা এটি বুঝতে পারি, স্বাধীনতার সেই মহান অর্জন শতবর্ষ জুড়ে যেনো আমরা ধারণ করতে পারি বিজয়ের পঞ্চাশে সেই কামনাই রইল’।
সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ কলেজ শিক্ষার্থী মাসুদ শাহরিয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর, দীর্ঘ এ সময়ে বদলে গেছে অনেক কিছুই। ইতিহাসের পাতায় সেদিন, নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল। সেই স্বাধীন দেশ ও দেশের মানুষগুলো কেমন আছে এখন? ৫০ বছরের পথচলায় সবার আগে এ প্রশ্নেরই জবাব খুঁজতে হয়।
৫০ বছরে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের এই উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ আদতে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা একটা ভাববার বিষয়। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের দ্বারপ্রান্তে এই ডিজিটালাইজেশন কতটুকু গিয়ে পৌঁছেছে তাও একটা বিরাট প্রশ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক উন্নয়নের কথা থাকলেও আদতে সাধারণ মানুষদের কাছে উন্নয়নের লাগাম অনেকটাই অদৃশ্য। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মুক্ত গণতন্ত্র চর্চা ও সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি সহ এমন নানান বিষয়ে জরাজীর্ণ নামমাত্র গনতান্ত্রিকতা আদতে আমাদের অবস্থান তুলে ধরছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ঠিক কতটা ফলপ্রসূ আর কার্যকারিতা বয়ে আনে তা অজানা। তবে, আমরা যেনো সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বুকে লালন করে এগিয়ে যেতে পারি এই প্রত্যাশাই আজকের দিনের কাম্য’।
তাদের বিজয়ের আশা, আকাঙ্ক্ষা আর মতামতের সঙ্গে মিলিয়ে আমিও বলতে চাই বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ হোক। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হোক। এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে। বিজয়ের পঞ্চাশে শুভেচ্ছা হে প্রিয় বাংলাদেশ। জয় বাংলা।