শিক্ষা

বই চূড়ান্ত না হওয়ায় এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছে

Share this:

এখনো ছাপা হয়নি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই। এমনকি বই চূড়ান্তকরণও এখনো শেষ করা যায়নি। আর বই না থাকায় এসএসসি উত্তীর্ণ লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঘরে অলস সময় কাটাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর এখনো একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজন পড়বে। আগের বছরগুলোতে জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই ছেপে বাজারজাত করা হয়েছে। আর ১ জুলাই কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থী, প্রকাশক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়া হলেও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই কিনে পড়তে হয়। এবার ১৬ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করায় অন্তত ২২ লাখ পাঠ্যবই ছাপাতে হবে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ছাপার দরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের জন্য ২৪টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কেবল একটি প্যাকেজের অধীনে দুটি দরপত্র জমা পড়ে। এনসিটিবি গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকের পুরো বই একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানকে বাজারজাত করার দায়িত্ব দেয়ায় তা নিয়ে প্রকাশকরা প্রতিবাদ জানায়। তাছাড়া গত বছর বইয়ের মান নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছিল। ওসব কারণে এ বছর এনসিটিবি একটু বুঝেশুনে দরপত্র আহ্বান করতে চাইছে।
সূত্র জানায়, একাদশ শ্রেণিতে বিষয় বেশি হওয়ায় সব বই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে ওসব বইয়ের পা-ুলপি এনসিটিবি অনুমোদন করে থাকে এবং প্রকাশকরাই তা বের করেন। আর বাংলা, বাংলা সহপাঠ আর ইংরেজি পাঠ্যবই এনসিটিবি দরপত্র আহ্বান করে রয়্যালিটির বিনিময়ে প্রকাশকদের বিক্রি করার অনুমতি দিয়ে থাকে। এ বছর ওই তিনটি বই ছাড়াও আইসিটি বিষয়ের বইও এনসিটিবি থেকে দেয়া হবে। তবে ওই বইটি বর্তমানে লেখার কাজ চলছে। এ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৪টি বই এনসিটিবি নিজে প্রকাশ করবে।
সূত্র আরো জানায়, করোনার কারণে কলেজের ভর্তি পিছিয়ে গেলেও বাজারে বই থাকলে তা কিনে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে পড়তে পারতো। কিন্তু বই না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। আর অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এই শ্রেণির বইগুলো বাজারে নকল হয়। এবার এনসিটিবির বাংলা ও ইংরেজি বই বাজারে আসতে দেরি হলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কারণে নকল বইয়ে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চড়া মূল্যে নকল বই কিনতে হতে পারে। তবে এনসিটিবি সংশ্লিষটদের দাবি, উচ্চ মাধ্যমিকের বই বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সরকার যেন লাভবান হয় ওই লক্ষ্যেই কাজ করা হবে। ওসব বিষয়ে এনসিটিবি সরকারের কেন্দ্রীয় ক্রয়সংক্রান্ত সংস্থার (সিপিটিইউ) পরামর্শ নিচ্ছে।
এদিকে পাঠ্যবই দেরিতে প্রকাশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল জানান, সমিতি চায় গতবারের মতো কোনো অসম প্রতিযোগিতা যেন না হয়। কারণ বইগুলোর বাজারজাতকরণের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই সারাদেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে যাতে সময়মতো বইটি যায়। সমিতির সদস্য সারাদেশের ২৬ হাজার লাইব্রেরি ওই কাজটি করে থাকে। বেশি রয়্যালিটি দিলেই তাকে বাজারজাতকরণের দায়িত্ব দিতে হবে- এনসিটিবির এই নীতির কারণে বইয়ের গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে শিক্ষার্থীদের বই কিনতে হবে। প্রকাশক সমিতি চায় এনসিটিবি সবাইকে ডেকে নিয়ে সুষ্ঠু দরপত্রের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের কাজ দিক।
অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকের ভর্তি ও ক্লাস শুরুর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। এ কারণে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা এখনো হয়নি। কলেজের ভর্তি ও এইচএসসি পরীক্ষা- এ দুটিই বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে জড়িত বিশালসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যকে সরকার ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে না। কাজেই এ মুহূর্তে কোনোভাবেই বলা যাচ্ছে না যে এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে। যখন পরীক্ষা নেয়ার মতো স্বাস্থ্যঝুঁকিবিহীন পরিবেশ তৈরি হলেই এটা সম্পন্ন হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যবই ছাপা না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবি এখন দরপত্র তৈরি করছে। এবার যেহেতু জুলাইয়ের প্রথম দিনে ক্লাস শুরু হচ্ছে না, তাই একটু ধীরেসুস্থে কাজ শুরু করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *