জাতীয়সারাদেশ

যে ৫ বিষয় জানা দরকার :বাতাসে করোনা

Share this:

বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের তাণ্ডব কবে থামবে সে সর্ম্পকে কোনও স্পষ্ট তথ্য নেই গবেষকদের হাতে। কোন মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস; তা নিয়েও বেশ দ্বিধায় পড়তে হয়েছে তাদের। তবে বাতাসেও যে করোনা ছড়াচ্ছে, এবার অনেকটা জোর দিয়েই সেই দাবি তুলেছেন তারা।

৩২টি দেশের ২৩৯ জন গবেষকের স্বাক্ষর করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও)। এতে তারা বাতাসে ক্ষুদ্র কণাগুলো থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছেন।

প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি কিংবা তার সংস্পর্শ ছাড়াও আবদ্ধ পরিবেশ, ভিড়ের মধ্যে বা যেখানে আলোবাতাস কম সেখানকার বাতাস থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

বাতাসে করোনা ছড়ানোর উ্পায়, সংক্রমণ ও এ থেকে রক্ষার উপায়সহ এমন পাঁচটি বিষয়ে তথ্য দিয়েছে আলজাজিরা।

বায়ুবাহিত সংক্রমণ

এতদিন ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে, মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে যে জলকণা বা ড্রপলেট ছড়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা থেকে অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।

তবে গবেষকরা বলছেন, শ্বাসপ্রশ্বাসের ড্রপলেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ বা অ্যারোসল কণা থেকেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। বাতাসে এটি দীর্ঘ সময় ভেসে থাকতে পারে। এটি কয়েক মিটার পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে। যখন কেউ চিৎকার করেন কিংবা গান করেন তখনও এটি ছড়াতে পারে বাতাসে।

ড্রপলেট সংক্রমণ থেকে আলাদ

হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ড্রপলেট সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের অঞ্চল থেকে পাঁচ থেকে ১০ মাইক্রোমিটারের মধ্যে ভাইরাস থাকা জলকণা ছড়িয়ে পড়ে। তবে শ্বাসপ্রশ্বাসের ড্রপলেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ বা অ্যারোসল কণা ছড়িয়ে পড়ে অল্প জায়গার মধ্যে।এপরপর তা ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে ও মিশে যায়। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক মিনিট সময় লাগে।

যুক্তরাজ্যের অণুজীব বিজ্ঞানী স্টেফানি ডেন্সার বলেন, ড্রপলেট বা অ্যারোসল কণার মাধ্যমে তিন ঘন্টা পর্যন্ত এই ভাইরাস টিকে থাকতে পারে। অবশ্য এটি নির্ভর করে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা, অতিবেগুনি রশ্মি আলো এবং এমনকি বাতাসে অন্যান্য কণার উপস্থিতির ওপর।

বাতাসে যেভাবে ছড়াচ্ছে

ড্রপলেট সংক্রমণের মতোই অ্যারোসল কণার সংক্রমণ। শ্বাসপ্রশ্বাস, কথা বলা, হাসাহাসি, হাঁচি-কাশি, গান গাওয়া কিংবা চিৎকারের সময়ও আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

স্টেফানি ডেন্সার বলেন, শ্বাসপ্রশ্বাসে হয়তো ততটা প্রভাব ফেলে না তবে হাঁচি-কাশি, চিৎসকার করা, গান গাওয়া এই প্রক্রিয়ায় করোনা দ্রুতই করোনার ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, যদি এমনও হয় যে, কেউ হয়তো ওই মাত্রায় এই ভাইরাস বহন করছে যাতে তার শরীরে সেভাবে সংক্রমণ ঘটেনি; তার কাছে গেলে কিংবা তার সামনে শ্বাস গ্রহণ করলেও তার মাধ্যমে অন্য কারো শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।

যেসব হাসপাতালে করোনার রোগী রয়েছে সে হাসপাতালগুলোতে বায়ুবাহিত সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। রোগীদের কাছ থেকে ছড়িয়ে পড়া অ্যারোসল কণার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস।

বিশেষ পরিস্থিতিতে যেখানে নেবুলাইজার, ব্রংকোসকপি, ইন্টিউবেশন কিংবা অন্য প্রক্রিয়া ব্যবহার হচ্ছে সেখানেও অ্যারোসল কণার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতালে সেবা দেওয়ার সময় তাদের যথাযথভাবে পিপিই ও এন৯৫ মাস্ক পরতে হবে।

বায়ুবাহিত করোনা কতটা সংক্রামক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই বলছে, সংক্রমণের প্রথম উপায় হলো আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে আসা জলকণা। গবেষকদের দাবির সঙ্গে এই বক্তব্যেও এক রকম তারা স্বীকার করেছে বাতাসের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে করোনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কারিগরি প্রধান বেনডেট্টা অ্যালেগ্রাঞ্জি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যেসব প্রমাণ উঠে আসছে, তাতে বিশেষ কিছু পরিস্থিতি যেমন ভিড়, আবদ্ধ জায়গা বা দুর্বল ভেন্টিলাইজার ব্যবহার করা হয় এমন জায়গাগুলোতে বাতাস থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বাতাসে করোনা ছড়ানোর তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠি লেখা গবেষকদের একজন ডেন্সারও। তিনি বলেন, যে স্থানে আক্রান্ত কেউ রয়েছেন বা যেখানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে রয়েছে সে স্থান থেকে আপনি যত দূরে থাকবেন আপনার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাও তত কম।

রক্ষা পাবেন কীভাবে?

ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষায় যথাযথভাবে মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করার ওপর শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে করে গণপরিবহন ও যে ভবনে অনেক মানুষ অবস্থান করছে সে জায়গা থেকে দূরে থাকতে বলছেন তারা।

স্কুল, অফিস বা হাসপাতালের মতো জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার জন্য দরজা জানালা খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমতে পারে বলে ধারণা তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *