কবি বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরে আজ বাৎসরিক পূজা
বরিশাল ব্যুরো : মধ্যযুগের অমর সৃস্টি “মনসা মঙ্গঁল” কাব্যর রচয়িতা কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত “মনসাকুন্ড” নামেখ্যাত জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ৫২৭ বছরের পুরনো মনসা মন্দিরে দেবী মনসার বাৎসরিক পূঁজা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে ।
পঞ্জিকা মতে, প্রতিবছরের শ্রাবন মাসের শেষদিনে বিষ হরি বা বিষ হরণকারী দেবী মনসার পূঁজা ভারতীয় উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এ বাক্য ধারন করে বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে বাৎসরিক পূঁজায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে ।
মনসা মঙ্গল কাব্য ও জনশ্রুতির ইতিহাস মতে, ৫২৭ বছর আগে মধ্যযুগে সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে ইংরেজী ১৪৯৪ সালে কবি বিজয় গুপ্ত দেবী মনসা কর্তৃক স্বপ্ন দেখে নিজ বাড়ির সু-বিশাল দীঘি থেকে পূঁজার একটি ঘট পেয়ে তা তুলে এনে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে দেবী মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।
পরে দেবী মনসার আদেশে দিঘীর ঘাটের পাশ্ববর্তী একটি বকুল গাছের নীচে বসে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েই “মনসা মঙ্গল” কাব্য রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে ওইবছর বিজয় গুপ্ত মনসা মঙ্গঁল রচনা করে রাজ দরবারে “মহা কবি”র খেতাবে অধিষ্টিত হন। সেখান থেকেই মনসা মঙ্গল কাব্যে বিশ^জুড়ে কবির পরিচিতি পান বিজয় গুপ্ত ।
জনশ্রুতি রয়েছে, দেবী পদ্মা বা মনসা বিজয় গুপ্তের কাব্য রচনায় সন্তুস্ট হয়ে আশির্বাদ হিসেবে বিজয় গুপ্তকে স্বপ্নে বলেছিলেন “তুই নাম চাস?, না কাজ চাস?” উত্তরে বিজয় গুপ্ত বলেছিলেন “আমি নাম চাই”। যে কারনে তার নাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরলেও তিনি দেহত্যাগ করেছেন উত্তরাধিকার বিহীন। বিজয় গুপ্তর জন্ম তারিখ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে নির্নয় করা হলেও মৃত্যুকাল সম্পর্কে সঠিক কোন দিন তারিখ গবেষকরা বলতে পারেন নি। গবেষকদের ধারণা মতে, ১৪৫০খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করা এই বিখ্যাত কবি সম্ভবত ৭০ বছর বয়সে ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে কাশী ধামে দেহত্যাগ করেছেন ।
কবি বিজয় গুপ্তের স্মৃতি রক্ষা মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনারা বিজয় গুপ্তের মন্দির থেকে মনসা দেবীর বিগ্রহ নেওয়ার পর ২০০৮ সালে সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দদের আর্থিক অনুদানে প্রায় একটন ওজনের পিতলের তৈরি মনসা দেবীর প্রতিমা পূণস্থাপন করা হয়। দৃষ্টি নন্দন হবার কারণে বরিশাল জেলার পর্যটন এলাকা হিসেবে বিজয় গুপ্তর প্রতিষ্ঠিত মনসা মন্দির রয়েছে অগ্রভাবে ।
বরিশাল জেলা প্রশাসন জেলার দর্শনীয় স্থানের তালিকার শীর্ষে রেখেছে ঐতিহাসিক বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরের নাম। দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পর্যটনের উল্লে¬খযোগ্য স্থান হিসেবেও রয়েছে এ মন্দিরের স্বীকৃতি ।
মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল দাশ গুপ্ত জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও পূজা উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার-হাজার ভক্তবৃন্দ ইতোমধ্যে পূজার্ঘ্য নিয়ে মন্দিরে আসতে শুরু করেছেন ।
নিরাপত্তা ও শৃংখলার জন্য মন্দির ও পূঁজা কমিটির নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি থানা পুলিশও পূজায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছেন ।