দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন : ১১বছরে সারের মূল্য না বাড়ার সুফল
করোনা মহামারী ও আগাম বন্যায় চ্যালেঞ্জ থাকলেও তেমন ঝুঁকি দেখছে না সরকার। আমন উৎপাদন হয়েছে ব্যাপক। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য রেকর্ড ছুঁয়েছে। ইতিমধ্যেই চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ।
সর্বশেষ রোপা আমন উৎপাদনের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। শুধু ধান নয় প্রায় প্রতিটি খাদ্যশস্য উৎপাদনেই রেকর্ড করছে বাংলাদেশ। সামনে খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা।
করোনা মহামারী-উত্তর সারাবিশে^ নিশ্চিত পরিণতি যেখানে খাদ্যসংকট, ঠিক তখনই বাংলাদেশ সম্পর্কে উল্টো তথ্য দিচ্ছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় চাল উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিশেষ করে সার ব্যবস্থাপনার সুফলকে কাজে লাগিয়ে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যোৎপাদন হচ্ছে। শুধু খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্নই নয়, হয়েছে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশও। গত ১১ বছরে সারের মূল্য বৃদ্ধি না হওয়ায় সারাদেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যোৎপাদন হয়েছে। বছরে প্রায় ৩ কোটি টন চালের চাহিদার বিপরিতে উৎপাদন হচ্ছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন। ফলে বছরে ৮৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকায় বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ হেক্টরপ্রতি ধানের ফলনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশের অবস্থান। এখানেই থেমে যাননি বাংলার কৃষকরা। একই জমিতে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য পথিকৃত।
বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত বিশ্বের ক্ষুধা সূচকের (অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু-সহ একাধিক মাপকাঠির ওপরে ভিত্তি করে তৈরি হয় বিশ্ব ক্ষুধা সূচক) প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়ার মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত বিশ্বের ক্ষুধা সূচকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বছরে প্রায় ৩ কোটি টন চালের চাহিদার বিপরিতে উৎপাদন হচ্ছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন । তবে ইদানীং মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে দিন দিন বাড়ছে গমের চাহিদা।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগাম বন্যার চ্যালেঞ্জ থাকলেও তেমন ঝুঁকি দেখছি না। আমন উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সরকার কৃষকদের যাতে ধান কাটতে এবং লাগাতে সুবিধা হয় সেজন্য অর্ধেক দাম দিয়ে ধান কাটার ও লাগানোর মেশিন কিনে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারেন ২৫ টাকার সারের দাম কমিয়ে ১২ টাকায় করতে। বিগত জোট সরকারের আমলে কৃষকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সার কিনতে পারেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সারের জন্য কাউকে কোথাও গিয়ে অপেক্ষা করতে হয়না। সবার জন্য সার সহজলভ্য করে দেয়া হয়েছে।
বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) সূত্রে জানা গেছে, আমন বীজ অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। এবার ধানের দাম বেশি থাকায় চাষিরা আমন উৎপাদনে উৎসাহিত হয়েছেন। অস্বাভাবিক কিছু না হলে এবার আমনের ফলন ভালো হবে বলে বিএডিসি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর তার এক নিবন্ধে বলেছেন, বিগত আউশ, আমন ও চলতি বোরোর আশাতীত বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে এ বছর চালের উৎপাদন হবে মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন। এতদিন চাল উৎপাদনের তিন নম্বর স্থানটি দখলে ছিল ইন্দোনেশিয়ার। এবার এ স্থান বাংলাদেশের দখলে। গত আমন মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। আউশ মৌসুমেও চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন সাড়ে চার লাখ টন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি’র (নাটা) কৃষি গবেষক ও পুষ্টিবিদ ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেছেন, স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২ সালে খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। এর পরের ৪৪ বছরে এখানে মানুষ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি। খাদ্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, দেশে এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে তিনগুণ বেশি, ভূট্টাসহ এর পরিমাণ প্রায় চার কোটি মেট্রিক টন। এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ।