জাতীয়

চালতা, তেঁতুল ও ছাতিয়ান গাছ লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

Share this:

দেশব্যাপী এক কোটি চারা রোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচি উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা জানান, আজ তিনি চালতা, তেঁতুল ও ছাতিয়ান এই তিনটি চারা লাগিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সরকারি বাসভবন গণভবনে চারা লাগিয়ে দেশব্যাপী এক কোটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় বলেন, ‘আজ আমি লাগিয়েছি একটা চালতা গাছ, তেঁতুল গাছ, আর একটা হচ্ছে ছাতিয়ান গাছ। ছাতিয়ান গাছটা খুব বড় হয়। এর কাণ্ড খুব মোটা হয় এবং কাঠ হিসেবে খুব ভালো। সেজন্য ওটা লাগানো হয়েছে। আর তেঁতুলের কথা শুনলেই জিভে পানি আসে। ছোটবেলার কথা মনে হয়। তবে এই বৃদ্ধ বয়সে আসে না। তেঁতুলের শক্তি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের দেশ থেকে তেঁতুলের জাতটা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে এটার চাহিদা আছে। আর ফুচকা-চটপটি তো সবার খেতে ভালো লাগে। সেজন্য তেঁতুল সব সময় দরকার। সেজন্য আমি তেঁতুল গাছের ওপর একটু জোর দিয়েছি। আর চালতাটাও। চালতার পাতাগুলো যেমন সুন্দর দেখতে, ফুল আরও সুন্দর। চালতার আবার অনেক গুণ রয়েছে। ডালে চালতা দিয়ে খেতে তো এমনি মজা লাগে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশটা রক্ষা হওয়া দরকার। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টির দরকার। কাজেই আমরা তাদের খাদ্য এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কথা চিন্তা করেই কিন্তু বৃক্ষরোপণ করি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি শুরু থেকেই যে তিনটা গাছ লাগাতে হবে। একটা ফলের গাছ। একটা কাঠের জন্য যেটা আর্থিক সচ্ছলতা আনবে। আরেকটা ভেষজ গাছ। অর্থাৎ যে গাছ দিয়ে নানা ধরনের ঔষধ সৃষ্টি হয়, সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এই ধরনের গাছ।’

যেভাবেই হোক গাছ লাগান

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবাইকে আহ্বান করবো, যে যেখানে আছেন, আপনার যতটুকু জায়গা আছে, একটা গাছ লাগান। যারা শহরে থাকেন ছাদে বা বারান্দায় একটা টবে গাছ লাগান। যেভাবেই হোক একটু গাছ লাগালে ভালো লাগবে। মনটাও ভালো থাকবে। কিছুটা আপনার নিজের সচ্ছলতা আসবে। নিজের হাতে লাগানো একটা গাছের একটা কাঁচামরিচ খেলেও কিন্তু ভালো লাগে। কাজেই সেইভাবে আমি আহ্বান করবো সবাইকে। আসুন আমরা সবাই মিলে গাছ লাগাই। আমাদের দেশটা একটা বদ্বীপ, এই দেশটাকে আমরা রক্ষা করি এবং দেশটাকে উন্নত করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বা তার বেশি সময় পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে বনায়ন, সবুজ বেষ্টনী যাতে সৃষ্টি হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে বৃক্ষরোপণ করে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। কাজেই তার স্মরণে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা এই পদক্ষেপ প্রতিবছরই নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশে বনায়ন সৃষ্টি। আমি যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন মাত্র সাত ভাগ আমাদের বনায়ন ছিল। আজ প্রায় ১৭ ভাগের ওপরে আমরা করতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ২৫ ভাগ বনায়ন আমরা সারা বাংলাদেশে করবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।‘

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেই চুরাশি সালে আমরা বনায়নের এ কাজ শুরু করি। ৮৪ থেকে শুরু করে আমরা প্রতিবছর পহেলা আষাঢ় সমগ্র বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ করি। আমাদের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ওপরে দায়িত্ব থাকে। কৃষকলীগ সমগ্র বাংলাদেশে এই উদ্যোগটা নেয়। আমাদের সব সহযোগী সংগঠন মিলে আমরা বৃক্ষরোপণ করি।’

করোনা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবো

করোনা ভাইরাস দেশের অগ্রযাত্রা সাময়িকভাবে থামিয়ে দিলেও তা সামলে দ্রুত সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি আশা করি জনগণ এর থেকে বেরোতে পারবে। আবার আমরা এগিয়ে যাব। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের না, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে আমি মোকাবিলা করে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলা শিখেছি। তার পাথেয় ‘সৎ পথে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করো’ ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আসুন সবাই মিলে এ বিরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে কাজ করি,  জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করি। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো।”

আজ বিশেষ দিন

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজকের দিনটা একটা বিশেষ দিন। কারণ ২০০৭ সালে তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছিল। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, আমাদের দেশের জনগণের প্রতি, প্রবাসীদের প্রতি এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতি। সেই সঙ্গে আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের সংগঠন, বিশেষ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ আমাদের সব সংগঠন, সহযোগী সংগঠনের প্রতি। তারা প্রতিবাদ করেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ২৫ লাখ সিগনেচার সংগ্রহ করে সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছিলেন। তাদের এই সংগ্রহে আমি জোর পেয়েছিলাম মনে এবং আন্তর্জাতিক চাপে আমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যদিও আমার বিরুদ্ধে বিএনপির আমলে ১২টা মামলা দেওয়া হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও পাঁচটা মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। প্রতিটি মামলায় আমি বলেছি যে তদন্ত করে দেখতে হবে যে আমার দুর্নীতি আছে কিনা। ঠিক সেভাবে করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমি সব কিছু থেকে খালাস পেয়েছি। জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা যে তাদের সমর্থনে আমি মুক্তি পেয়েছিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *