বরিশাল বিভাগ

জাতির জনক শুধু খেতাব নয়!

Share this:


মোহাম্মদ আলী বাবু, সম্পাদক : আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর জব্বার ফরাজী ছিলেন একজন আদর্শবান প্রধানশিক্ষক। ছোটবেলায় যখন বাবার সাথে স্কুলে যেতাম তখন আমাকে বাবা বলতেন-আমার ছেলে বড় হয়ে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করবে। তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষের প্রতি বিনয়ী হতে। সুখে, দুঃখে মানুষের প্রতি সদয় হতে।
বাবা বলতেন, একশ’ টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে এক টাকা রোজগার করা অধিক শ্রেষ্ঠ। তিনি আমাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতেন, বঙ্গবন্ধু জাতির জনক এমনি এমনিতেই হয়নি। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলার সাত কোটি মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু ফাঁসির রশিতে ঝুলতেও প্রস্তুত ছিলেন। তার সেই আত্মত্যাগের কারণেই বাংলার সাত কোটি মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত করেছেন। সুতরাং মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে চির অমর হয়ে থাকে।
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন, বরিশালের কৃতিসন্তান মোঃ কামাল হোসেন। যিনি বর্তমানে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কামাল হোসেন শুধু একটি নামই নয়; এ নামের সাথে যোগ করতে হয় মানবতা, দেশপ্রেম ও নিজ জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার গল্প। যিনি মানবতার কল্যাণে শুধু কাজই করে যাচ্ছেন না, একইসাথে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য অনুকরণীয় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকছেন। যার কাছে মানব সেবাই পরম ধর্ম। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই মানব সেবার কথা বলা আছে। আর মানব সেবার মাঝেই সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য পাওয়া যায়। চাইলে অনেকভাবেই মানুষের সেবা করা যায়। কিন্তু কামাল হোসেন সবার চেয়ে আলাদা। যিনি সমাজের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন কোনো স্বার্থ ছাড়াই। মেধা, মনন, কর্ম প্রয়াস, শ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের মধ্যদিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে।
কামাল হোসেন বলেন, মানুষের প্রতি মায়া-মমতা নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করলে যেকোনো মানুষ প্রশংসা পাবেন। তবে শুধু প্রশংসা পাওয়ার জন্য কিছু করা উচিত নয়। পুরস্কার কিংবা তিরস্কার এ দুটিই কাজের মূল্যায়ন। মানুষের জন্য কাজ করা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কাজ। আমার জন্ম মানুষের কল্যানের জন্য। যতোদিন বেঁচে থাকবো মানুষের সেবায় কাজ করে যাব।
কামাল হোসেন নিজ এলাকা বরিশালের কাঠালিয়াবাসীর একজন নির্ভরযোগ্য অভিভাবক। বিশখালী নদীর তীরঘেষে অবস্থিত আওরাবুনিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কামাল হোসেন। তারা বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর জব্বার ফরাজী ছিলেন একজন আদর্শবান স্কুল শিক্ষক। বাবার আদর্শ বুকে নিয়ে বেড়ে ওঠা কামাল হোসেন গোটা বরিশালবাসীর গর্ব।
শৈশব থেকেই শুভ্র-চঞ্চল স্বভাবের এবং নানা প্রতিভায় গুনান্বীত মানুষ ছিলেন কামাল হোসেন। ভাল কিছু শেখার নেশায় তিনি সারাক্ষন মেতে থাকতেন। ন¤্র ও বিনয়ী কামাল হোসেন ছাত্রজীবনে নিজ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ আওরাবুনিয়া মডেল হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর নিজ গ্রামীণ জনপদ পাড়ি দিয়ে বেতাগী ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ক্যাডার সার্ভিসের যোগ দেওয়ার আগ থেকেই নিজেকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন।
“নামে নয় কর্মেই পরিচয়” প্রবাদ বাক্যকে বুকে ধারণ করে বর্তমানে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত বরিশালের কৃতিসন্তান কামাল হোসেন শুধুমাত্র একজন প্রশাসকই নন, মানবতার জন্য দরদী বন্ধু। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথিকৃৎ হিসেবে ইতোমধ্যে নিজকর্মস্থলের যুব ও তরুণ সমাজের কাছে একজন জনপ্রিয় ও অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের দ্বারা তিনি প্রতিনিয়ত জেলাবাসীর ছোট-বড় সমস্যার সমাধান করে আসছেন। তিনি তার কর্মজীবনে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন।
তার নিরলস প্রচেষ্টায় জেলাব্যাপী উন্নয়ন সমন্বয়, ই-ফাইলিং সফলতা, উন্নয়ন কর্মকান্ডের যথাযথ তদারকি, জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এবং মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় আশ্রয় দেয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সেবা প্রদান করায় ইতোমধ্যে ‘জনপ্রশাসন পদক’ লাভ করেছেন।
এছাড়াও দেশেরে ক্রান্তিকালে করোনা মোকাবেলায় পর্যটক এলাকা কক্সবাজারে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক, গণসচেতনতা সৃষ্টি ও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। করোনাকালীন সময়ে বরিশালের নিজ এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে কামাল হোসেন তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপহার সামগ্রী হিসেবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। দুঃসময়ের মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের কাছে মানবতা আর মমতাই জীবনের এক নিদর্শন।
সাধারনত জাতির মেধাবী সন্তানরাই ক্যাডার সার্ভিসের অধীনে কর্মকর্তা হন। এসব মেধাবী মানুষগুলোর হাতে থাকে জাতির জন্য কিছু করার সুযোগ। কিন্তু ক’জন কর্মকর্তা জাতির কল্যাণে এ ক্ষমতা ব্যবহার করেন? তবে সময়ে সময়ে আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ উদ্ভাসিত হন। যারা কর্মে, মেধায় এবং মানসিকতায় সমাজকে আলোকিত করেন। যা মানুষ চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে। সমাজকে আলোকিত করতে গিয়ে তারা নিজেরাও হয়ে ওঠেন আলোকিত মানুষ। তেমনি একজন আলোকিত মানুষ জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন। যারমধ্যে রয়েছে তার স্কুল শিক্ষক পিতা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের আদর্শ। এ আদর্শেই তিনি নিজ কর্মস্থলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *