আরোগ্য লাভের পথে ভারত!
নিকষ কালো আঁধারের শেষে দেখা দিচ্ছে আশার আলো। প্রতিদিনই ধীরে ধীরে, কিন্তু বলিষ্ঠভাবে বাড়ছে সুস্থতা, কমছে মৃত্যুহার। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের ভরকেন্দ্র ভারতও বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি একইভাবে সুনির্দিষ্ট পথে ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভের দিকে এগিয়ে চলেছে। যদিও এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে ভারতকে। তবুও সুনির্দিষ্টভাবেই সেই পথ ধরে এগিয়ে চলেছি আমরা।
২২ জুন মঙ্গলবার ভারতে নতুন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৬৩০। যা গত তিন মাসে সর্বনিম্ন। যদিও সরকারি সূত্রে ২৫ জুন শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৫১ জন ডেল্টা প্লাস প্রজাতির কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে। টিকাকরণ কর্মসূচি জোরকদমে এগিয়ে চললেও, ১৩০ কোটিরও বেশি দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়া সহজ কাজ নয়। কিছুটা সময় তো লাগবেই।
এরইমধ্যে সুখবর, সরকারের চমকপ্রদ টিকাকরণ নীতির সুবাদে গত ২১ জুন মাত্র একদিনেই প্রায় ৮৬ লক্ষ (85.96 hundred thousand) মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশের প্রতিটি রাজ্যে ১৮ ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রে সরকারের ফ্রি ভ্যাকসিন প্রদানের কর্মসূচিই এর প্রধান কারণ।
পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের একটা অংশ প্রতিনিয়ত প্রচার করে চলেছে, দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো টাইটানিক জাহাজের মতোই ভেঙে পড়েছে। কিন্তু, সত্যিটা হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের সুদৃঢ় পরিচালন ব্যবস্থার ফলে এখন তীরের রেখা দেখতে পাচ্ছে দেশবাসী।
কেন্দ্রীয় সরকার দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল শক্ত হাতে ধরেছে এবং প্রতিটি রাজ্যকে পরিকাঠামোগত সরঞ্জাম প্রদান করে তাদের পাশে থাকছে। এর ফলে অনেক রাজ্যেই এখন কোভিড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্য কোভিড বিধিনিষেধও শিথিল করেছে। যদিও রাশ এখনও আলগা করেনি। কেননা যে কোনও সময় ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে নভেল করোনা ভাইরাস। তার জন্য প্রশাসনের তরফে সজাগ দৃষ্টিও রাখা হয়েছে গোটা ব্যবস্থাটির উপর। আশার আলো, ২৫ জুন রাজস্থানে শেষ ৮৬ দিনে নতুন করে একজনেরও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
এরই মধ্যে রয়েছে শঙ্কাও। দেশের অনেক বিশেষজ্ঞই তৃতীয় ঢেউয়েরও সতর্কতা ইতিমধ্যেই জারি করেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার দৃঢ় প্রত্যয়ী, গোটা দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে উন্নতিকরণ হয়েছে, তাতে তৃতীয় ঢেউ আসলেও তাকে বলিষ্ঠভাবেই মোকাবিলা করা যাবে।
তবে সবকিছুর সমালোচনা তো থাকবেই। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলের একাংশ দাবি করছে, কেন্দ্রীয় সরকার যে তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরছে, তাতে নাকি অনেক গলদ রয়েছে। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা নাকি কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। আসল সংখ্যা, সরকারি পরিসংখ্যানের অনেক বেশি। যদিও এর স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্যপ্রমাণ এখনও সমালোচকরা দিতে পারেনি।
ভারতে টিকাকরণনীতির আরও একটি চমকপ্রদ দিক হল, এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া। আবার এই বিতর্ককে উপেক্ষা করলে চলবে না।
উৎপাদন ক্ষমতা ও পশ্চিমী প্রযুক্তিগত সংযুক্তিকরণের ফলে বিশ্বে সবচেয়ে সস্তায় উন্নতমানের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের। সমালোচকরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, যে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ, কয়েকটি আফ্রিকা দেশ, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিতে দ্বিতীয়বারের মতো তরঙ্গটি আঘাত হানার সময় সহায়তার প্রয়োজন ছিল ভারতের। সেই সময় উল্টে ভারতকেই সাহায্য নিতে হয়েছিল তাদের কাছ থেকে। কিন্তু, যেসব দেশগুলি সেইসময় ভারতকে সাহায্য করেছিল, তারা বর্তমানে অনেকটাই নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে।
মনে রাখতে হবে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হলে, তা কূটনৈতিক সাফল্য আনতে বাধ্য। তা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও। এটা অনেকটা পুরনো প্রতিধ্বনিময় উপত্যকার মতো। কিছু প্রতিধ্বনি দেরিতে এলেও তা জোরালো হয়।
ভারত এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিকাঠামোগত মানচিত্রে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। আর এভাবেই কূটনীতির ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন, আগামীদিনে ভারতকে বড়সড় সাফল্য এনে দেবে।
(লেখক- অয়নজিৎ সেন, পুরস্কারপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ সাংবাদিক এবং BBC, CNN-এর হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকতা করেছেন)