বরিশাল বিভাগ

বরিশালে রিমান্ডে নারী নির্যাতন, মেডিকেল রিপোর্টে মেলেনি আলামত : আঘাতের চিহ্ন পুরনো

Share this:


বরিশাল ব্যুরো : বর্তমান সময়ের আলোচিত ঘটনা জেলার উজিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলার নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক এবং যৌণ নির্যাতনের ঘটনা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে থানার দুই ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ।


পাশাপাশি একজন সার্কেল এএসপি এবং থানার ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন ওই নারী। এছাড়া অভিযোগ ওঠা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। ঠিক সেই মুহুর্তে নারী আসামি মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীকে রিমান্ডে নিয়ে যৌণ নির্যাতনের ঘটনাটি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। ওই নারীর করা শারিরিক ও যৌণ নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি মেডিকেল রিপোর্টে। এমনকি আঘাতের যে চিহ্ন দেখা গেছে তাও অনেক পুরানো বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে ।


বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল থেকে গত ৩ জুলাই আদালত এবং পুলিশের কাছে পাঠানো মেডিকেল রিপোর্ট থেকে বুধবার দুপুরে এ তথ্য জানা গেছে। ওই হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ইউনিট-২ এর একজন নারী ইন্ডোর মেডিকেল অফিসার এ মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করেছেন ।


তবে মেডিকেল রিপোর্টে কি আছে সে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে দাবি করেছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম। তাছাড়া ঘটনাটি বিচার এবং তদন্তাধীন থাকায় এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ।


সূত্রমতে, শেবাচিম হাসপাতাল থেকে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মিনতি বিশ্বাস ওরফে মিতু অধিকারীর দুই কনুই, গোড়ালিসহ ছয়টি স্থানে ছয় থেকে আটটি আঘাত রয়েছে। তবে সবগুলোই অনেক পুরনো আঘাত। সবমিলিয়ে আঘাতের গুরুত্ব সিম্পল (নরমাল) বলে মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক ।


মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালত নির্দেশে দিয়েছে একজন নারী চিকিৎসক দিয়ে ওই ভিকটিমের পরীক্ষা করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে। নির্দেশনা অনুযায়ী নারী চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই চিকিৎসক মেডিকেল রিপোর্ট খামে ভরে আমাকে দিয়ে গেছেন। তিনি যেভাবে দিয়েছেন সেভাবেই আদালতে পাঠিয়েছি। সুতরাং রিপোর্টে কি আছে সেটা আমার দেখার সুযোগ হয়নি ।


এ ব্যাপারে বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান হোসেন বলেন, একজনের নামে অভিযোগ আসতেই পারে। কিন্তু সব অভিযোগ কি সত্য হয়? অবশ্যই অভিযোগের প্রমাণ থাকতে হয়। তারপরেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে উজিরপুরের দুই ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একজন এএসপি এবং দু’জন ওসিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ।

ডিআইজি কার্যালয় থেকে পুরো ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কোন অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিললে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।


সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিপূর্বে মিতু অধিকারীর আরও দু’জন স্বামী ছিলো। কিন্তু তাদের সাথে মিতুর কোন যোগাযোগ নেই। মিতু বাবা ও মায়ের পরিবার ছেড়ে জামবাড়ি গ্রামে পাঁচশ’ টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে একা বসবাস করেন। বাসুদেব চক্রবর্তী নামের যাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার সাথে দীর্ঘদিন থেকে মিতুর পরকীয়ার সম্পর্ক চলে আসছিল। বাসুদেব ট্রাক চালক ছিলেন। পরকীয়ার সূত্র ধরে বাসুদেবের কাছ থেকে মিতু বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়। সম্প্রতি বাসুদেব ট্রাক চালোনার কাজ ছেড়ে দেন। এরপর থেকেই তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয় ।


সূত্রমতে, গত ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকার পরকীয়া প্রেমিকা মিতুর ভাড়াটিয়া বাসার পাশ থেকে বাসুদেব চক্রবর্তীর মরদেহ উদ্ধার করা হয় । ওই ঘটনায় বাসুদেবের ভাই বরুন চক্রবর্তী বাদী হয়ে ২৭ জুন উজিরপুর মডেল থানায় নিহতের পরকীয়া প্রেমিকা মিনতি বিশ্বাস মিতুকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন ।

২৮ জুন থানা পুলিশ মিতুকে গ্রেফতার করে। ২৯ জুন পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালত মিতুকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই মিতুকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মাইনুল ইসলাম ।


আদালতে দাঁড়িয়ে বিচারকের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে শারিরিক ও যৌণ নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিতু অধিকারী । আদালতের বিচারক মিতুর অভিযোগ শুনে তাকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মেডিকেল প্রতিবেদন দিতে বলেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালককে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *