আন্তর্জাতিক

করোনায় বিশ্বে প্রাণহানি ৪ লাখ ৫৬ হাজার

Share this:

বিশ্বে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়েছ। গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে শুরু হওয়া করোনার সংক্রমণ বিশ্বের ২১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বেজুড়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সংখ্যা ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৯৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ লাখ ৫৬ হাজার ২৬৯ জন। করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ২৬০ জন।

এখনো কার্যকর কোন প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) আবিস্কার না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানীসহ বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো প্রাণঘাতি এ ভাইরাসটির সংক্রমণ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল।

করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোরই শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র; এরপর ব্রাজিলের অবস্থান। সংক্রমণে তিন থেকে পাঁচ নম্বরে আছে যথাক্রমে রাশিয়া, ভারত ও যুক্তরাজ্য। মৃত্যু তালিকায় তিন থেকে পাঁচ নম্বরে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্সের অবস্থান। বাংলাদেশ উঠে এসেছে সংক্রমণ তালিকার ১৭ নম্বরে। করোনার উৎসস্থল চীন নেমে গেছে সংক্রমণ তালিকার ২১ নম্বরে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিসংখ্যান প্রদানকারী নির্ভরযোগ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের ওয়েবসাইট থেকে শুক্রবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টায় সংগৃহীত তথ্যানুযায়ি, বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শীর্ষ তালিকার ৬ থেকে ১০ নম্বরে যথাক্রমে রয়েছে- স্পেন, পেরু, ইতালি, চিলি ও ইরান। ১১ থেকে ১৫ নম্বর অবস্থানে আছে যথাক্রমে জার্মানি, তুরস্ক, মেস্কিকো, পাকিস্তান ও ফ্রান্স। ১৬ থেকে ২০ নম্বরে আছে যথাক্রমে সৌদি আরব, বাংলাদেশ, কানাডা, কাতার ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

উন্নত দেশগুলো করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। চলছে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। তবে ভ্যাকসিন আবিস্কারের বিগত পরিসংখ্যান বলছে, নতুন কোন ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বা নির্মূলে কার্যকার ভ্যাকসিন আবিস্কার করতে ৬ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে প্রমাণিত প্রতিষেধক বাজারে পেতে বিশ্ববাসীকে আগামী (২০২১) বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।

উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫১ জন মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৮৮ জনের। আক্রান্তের হিসেবে মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ।

আয়তনে চতুর্থ এবং জনসংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি ভাইরাসটি প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে। প্রায় ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ৩৩ কোটি মানুষের বসবাস।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা শনাক্তের জন্য মোট ২ কোটি ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ১৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৪ জন মানুষ।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৯, মৃত্যু হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৬৯ জনের।

আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৬১ হাজার ৯১, মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৬৬০ জনের।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯১, মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৬০৪ জনের।

যুক্তরাজ্যে (ব্রিটেন) আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬৯, মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ২৮৮ জনের।

স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৮, মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ১৩৬ জনের।

পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৮, মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৪৬১ জনের।

ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯, মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজার ৫১৪ জনের।

চিলিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার ১০৩, মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৮৪১ জনের।

ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৭, মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ২৭২ জনের।

ফ্রান্স সংক্রমণ তালিকার ১৫ নম্বরে থাকলেও মৃত্যুর তালিকায় দেশটির অবস্থান ৫ নম্বরে। ফ্রান্সে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪১, মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৬০৩ জনের।

বাংলাদেশ আছে সংক্রমণ তালিকার ১৭ নম্বরে। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ১৬৪ জন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ১৬ কোটির বেশী মানুষের এই দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫০৩টি।

করোনার উৎসস্থল চীন চলে গেছে সংক্রমণ তালিকার ২১ নম্বরে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৩২৫, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৪ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজার ৩৯৮ জন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণকে পার্ল হারবার এবং টুইন টাওয়ারে হামলার চেয়েও মারাত্মক বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্প ও তার মিত্ররা করোনা মাহামারীর জন্য সরাসরি চীনকে দায়ী করছে। তবে চীন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

নভেল (নতুন) করোনাভাইরাসের উৎস চীনের গবেষণাগার নাকি প্রাকৃতিকভাবেই এর উৎপত্তি; বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে একজোট হওয়া একশ’রও বেশী দেশের জোরালো দাবির মুখে তাতে সম্মত হয়েছে চীন। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তদন্তটি বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার নেতৃত্বে হওয়া প্রয়োজন।

পাঁচ মাসে প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। লকডাউনে বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। সংক্রমণ কিছুট নিয়ন্ত্রণে আসায় কয়েকটি দেশ এবং জীবন ও জীবিকার তাগিদে বেশ কিছু দেশ লকডাউন শিথিল করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি দেশে সংক্রমণ আবার বেড়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে খুব সতর্কতার সঙ্গে লকডাউন এবং অন্যান্য বিধি-নিষেধ ধারাবাহিকভাবে শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *