বিনোদন

বাবা দিবসে তারকাদের তারকা

Share this:

নায়করাজ রাজ্জাকের কনিষ্ঠ সন্তান চিত্রনায়ক সম্রাটও বাবা দিবসের এ দিনে বাবাকে স্মরণ করে কিছু অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন Daily Bangladesh Time এর সাথে । তিনি বলেন, ‘সব বাবাই তার সন্তানকে যেভাবে মানুষ করেন আব্বাও আমাকে সেভাবেই শাসন-বিধি-নিষেধ দিয়ে সঠিকভাবে বড় করার চেষ্টা করেছেন।

ভালো কাজ, খারাপ কাজের পার্থক্য নির্ণয় করা এবং কোনটি সঠিক কাজ সেটা নির্ধারণ করার বোধশক্তি তৈরিতে তিনি সবসময় সতর্ক থাকতেন। আদর্শ এবং ডিসিপ্লিনের শিক্ষা আব্বা যথাযথভাবেই আমাকে দিয়েছেন। তিনি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতেন।

আমরাও যেন সকালে উঠি এটি তার নির্দেশ ছিল। তার এ নিয়মটি বাসার সবাই মেনে চলি। এটি আমাদের সন্তানদেরও শিখিয়েছি। তারাও এটি মেনে নিয়েছে। ছোটখাটো বিষয় হলেও এগুলো জীবনের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। আব্বা সবার কাছে প্রিয় ছিলেন। তাই তার সঙ্গে বাইরে গেলে মানুষের ভিড়ের কারণে স্বাভাবিক পরিবেশ আর থাকত না। তখন খুব বিরক্ত লাগত।

সারাক্ষণ মানুষ ঘিরে থাকত। পরে বড় হয়ে বুঝেছি, তারা আসলে আব্বার ভক্ত। তাই আব্বাও হাসিমুখেই সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেন। বড় হয়ে বুঝতে পারলাম, বাবা বাংলাদেশের কত বড় সেলিব্রেটি। আব্বাকে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে, প্রত্যেক সময়েই মিস করি। কারণ আমার জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন তিনি। তার কথা ছাড়া জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেইনি। এ অভ্যাসটি এখনও আছে, তবে বাবা নেই।

চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াতের ছেলে কাজী মারুফ। বাবার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ে অভিষেক হয় তার। ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত তার অভিনীত ছবির বেশিরভাগই বাবার পরিচালনায়। তাই তার মিডিয়া জীবনটা বাবার প্রচ্ছন্ন প্রভাবে পরিচালিত হয়েছে।

নিজের জীবনে বাবার প্রভাব প্রসঙ্গে কাজী মারুফ বলেন, ‘আমি যে চলচ্চিত্রে আসব তা ছিল আমার নিজের ভাবনার বাইরে। আমাকে নায়ক বানানোর পুরো কৃতিত্বই আমার বাবার। একদিন মধ্যরাতে তিনি আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে বলেন, তোকে কালকে সকালে আমার সঙ্গে এফডিসি যেতে হবে।

ছবিতে অভিনয় করতে হবে। ভাবলাম, হয়তো বাবা কথার কথা বলেছেন। কিন্তু না, বাবার চাপে পড়ে আমাকে পরদিন এফডিসি যেতে হল এবং কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ক্যামেরা সামনে দাঁড়াতে হয়। এই হল আমার চলচ্চিত্রে আসার গল্প। চলচ্চিত্রে আসার পর দেখলাম, নানাদিকে আমার ঘাটতি রয়ে গেছে। এখন সেই ঘাটতিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি। নাচ শিখেছি, ফাইটিং শিখেছি। মাথায় আছে বাবার হুকুম, আমাকে আরও বহুদূর যেতে হবে।’

নব্বইয়ের দশকে দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে মিডিয়ায় আসেন অভিনেতা ও নাট্যকার আবুল হায়াতের বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত। মঞ্চ, টিভি এবং চলচ্চিত্র প্রত্যেকটি মাধ্যমেই সফল পদচারণা রয়েছে তার। এছাড়া চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। তার এসব অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে বাবাকেই এগিয়ে রেখেছেন। কারণ তার অনুপ্রেরণা না থাকলে সংস্কৃতির এ পথে সহজেই হয়তো আসা যেত না। এ প্রসঙ্গে বিপাশা হায়াত বলেন, ‘এটা ঠিক যে বাবার প্রেরণাতেই আমি অভিনয়ে আসি।

আমি পারব কিনা, এ বিষয়ে নিজের মধ্যেই ছিল দ্বিধা। আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন আমার বাবা। তার অভিনয় ছোটবেলা থেকেই খুব মন দিয়ে দেখতাম। বেশিরভাগ সময় বাবার অভিনয়ের সমালোচনা করতাম। আমি অভিনয় শুরু করার পর ভাবলাম, এবার বাবা আমার অভিনয়ের সমালোচনা করে শোধ নেবেন; কিন্তু তার কাছ থেকে প্রশংসা ছাড়া আর কিছু পাইনি। বাবার মুখের প্রশংসাই ছিল আমার অনুপ্রেরণা।’

সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। বাবা প্রখ্যাত অভিনেতা আলমগীর। নিজের ক্যারিয়ারে সফলতায় বাবার প্রভাব অনেক বেশি বলেই জানিয়েছেন তিনি। আঁখি বলেন, ‘আমার বাবা একজন স্বনামধন্য অভিনেতা। সবার প্রিয় এ মানুষটাকে বাবা হিসেবে পাওয়াটা আমার জন্য সত্যিই গর্বের। আমি মনে করি, বাবা একজন ফাইটার। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেন। মানুষ কী বলল না বলল তাতে যায় আসে না। আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে ভালো আছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার শুকরিয়া, এমন বাবার ঘরে আমার জন্ম হয়েছে।

জন্ম আমার ধন্য। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আমার বাবা। আমি নতুন কোনো গান বাঁধার সময় দর্শকের ভালো লাগার পাশাপাশি ভাবি, গানটা বাবার ভালো লাগবে তো? বাবা আমার গানের বড় সমালোচক। গানে কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা ধরে ফেলেন। কোনো ছাড় দেন না।

আবার ভালো হলে তার জন্য ধন্যবাদ দিতেও ভুল করেন না। বাবা চান নিজ যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সন্তানের কাছে বাবা মানেই এক নির্ভরতা। আমার কাছে বাবা মানে, একটা ঘরের ছাদ। সবকিছু থেকে পরিবারকে প্রটেক্ট করে।’

দেশের প্রখ্যাত গীতিকবি ও চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তারই মেয়ে সঙ্গীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার। বাবার আদর্শেই তার পথচলা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমার আব্বু দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত একজন মানুষ।

তার এই বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। যে কারণে আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। আমার আব্বু গাজী মাজহারুল আনোয়ার- এটাই আমার অনেক গর্বের বিষয়। আমি তার সন্তান হিসেবে অনেক স্থানেই সম্মানিত হই। জীবনে চলার পথে আব্বুর কর্মক্ষেত্রে সফলতার বিষয়টি বেশি ফলো করার চেষ্টা করি। আব্বুর সঙ্গেই শেয়ার করে শান্তি পাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *