বরিশাল বিভাগ

ইমামের কব্জি কর্তনকারী ‘জঙ্গি’ সংগঠনের কিনা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন

Share this:


বরিশাল ব্যুরো : মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা বাবলু মাঝিকে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে তার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইমাম পরিষদের নেতৃবৃন্দরা ।


সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, সর্বহারা নেতার ছেলে হামলাকারী বাবলু মাঝি (২৫) চট্টগ্রামে লেখাপড়া করার সময়ে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িতে পরতে পারে। এজন্য সে (বাবলু) মূল ইসলামের ধারা বাদ দিয়ে ভিন্ন পন্থায় চলে যায়। হামলাকারী শুধু একজন ইমামের হাত কেটে নেয়নি, সে সব ইমাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অন্তরে আঘাত করেছে। তাই এই হত্যাচেষ্টাকারীর ফাঁসি দিতে হবে ।


জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর বাজারে রবিবার বিকেলে ও শিলনদিয়া বাজারে শনিবার বিকেলে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোঃ নেছার উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মঞ্জুর রহমান বাচ্চু, জাহাপুর দাখিল মাদরাসার সুপার

মোঃ রুহুল আমিন, শিলনদিয়া বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব নজরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে ইমাম পরিষদ, স্থানীয় আলেম-ওলামাসহ উপজেলার কয়েক শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন ।


স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ইমামকে হত্যাচেষ্টা ও হাতের কব্জি কেটে ফেলার ঘটনায় থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া বাবলু মাঝি ‘উগ্র গোষ্ঠীর’ সাথে জড়িত থাকতে পারে। দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত না হলে ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বাবলুর ‘সম্পৃক্ত গোষ্ঠী’ । যদিও এলাকাবাসী সুনির্দিষ্টভাবে গ্রেফতারকৃত বাবলু ঠিক কোন উগ্র গোষ্ঠীর সাথে জড়িত তা জানাতে পারেননি। তবে স্থানীয়দের দাবি, আগরপুরে একটি উগ্রপন্থি গোষ্ঠির শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে ।


থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারী বাবলু সব স্বীকার করেছে। কোনো মতাদর্শ বা গোষ্ঠীর সাথে তার (বাবলু) সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।


জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেন বলেন, বাবুগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর (সাবেক আগরপুর) ইউনিয়নের পশ্চিম ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবলু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার একটি মাদরাসা থেকে কয়েক বছর আগে আলিম পাস করেছে। বর্তমানে সে লেখাপড়া করেন না। করোনাকালে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। এখন পোশাক কারখানায় নেই, আমাদের কাছে জানিয়েছে এখন সে গাড়ির ড্রাইভার ।


তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার বাবলু মাঝি এলাকায় বলে বেড়াতো ইসলামপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব আলী বেপারীর (৩৫) নামাজ পড়ানো সঠিকভাবে হয়না। এজন্য গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই মসজিদের মুসল্লী হওয়া সত্বেও সে (বাবলু) ইমাম মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব আলীর পেছনে নামাজ পড়তেন না। সে একা একা নামাজ আদায় করতো। নামাজ পড়ার নিয়মের দ্বিমত নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য ছিলো ।


অতিসম্প্রতি ইমাম ইয়াকুব আলীর কাছে মসজিদের চাবি চেয়ে বাবলু মাঝি জানায়, মসজিদে এতেকাফের মতো করে কয়েকদিন সে ইবাদত করবেন। কিন্তু চাবি দিতে হলে কমিটির অনুমতি নেওয়ার জন্য বলেন ইমাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবলু হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এ তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। তবে হামলাকারীর সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও দাবি করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। ইমাম ইয়াকুব আলী একই ইউনিয়নের জাহাপুর গ্রামের মৃত আজাহার আলী বেপারীর ছেলে ।


ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সুমন বলেন, বাবলু বাড়িতে বেশি থাকে না। চট্টগ্রামে লেখাপড়া করেছে। তাই গ্রামবাসী ধারণা করছেন সে (বাবলু) উগ্র কোনো গোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। তার কথাবার্তা সবসময় উগ্র ছিলো। ইসলাম নিয়েও তার মতামত শরিয়াহসম্মত ছিলোনা ।


রবিবার সকালে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, হামলার ঘটনায় আহত ইমামের বড় ভাই সেলিম বেপারী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন । উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর (সাবেক আগরপুর) ইউনিয়নের ইসলামপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব আলীকে ধারালো রামদা

দিয়ে কুপিয়ে তার বাম হাতের কব্জি ও ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করে দেয় বাবলু মাঝি। সে (বাবলু) ওই গ্রামের সর্বহারা নেতা মৃত হারুন মাঝির ছেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *