সারাদেশ

করোনায় ভীত নয় প্রকৃতি- তাইতো সেজেছে অপরূপ সাজে ঘর বেঁধেছে বাবুই পাখি

Share this:

মোহাম্মদ আলী বাবু \\ মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। ভাইরাসের দাপটে মানব সভ্যতা আজ হুমকির মুখে। দেশের সর্বত্রই করোনা আতঙ্ক। তবে এ মহাদুর্যোগ বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি প্রকৃতিতে। বরং প্রকৃতি তার আপনগতিতে ফুটে উঠেছে।
একসময়ের কর্মব্যস্ত বরিশালের বিভিন্ন সড়ক, উদ্যান ও বিনোদনকেন্দ্র থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদে প্রকৃতির নানান সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। সর্বত্রই এখন প্রকৃতির সাজ সাজ রব। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, রাজা বাহাদুর সড়ক, ডিসি লেক, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক ঘিরে অসংখ্য গাছে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু ও জারুল ফুল। রয়েছে প্যারাসাইট বা পরজীবী ফুলের উপস্থিতি। ওইসবস্থানে ফুলের মুগ্ধতা দেখতে গত বছরের এইদিনে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ভিড় ছিলো। কেউ কেউ এসবস্থানে বন্ধুুদের নিয়ে আড্ডা বসিয়ে দিয়েছিলেন, কেউবা সেলফি আবার কেউবা পছন্দের মানুষকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন। এবার করোনার কারণে ঘরে বন্দি থাকায় তেমন কোন প্রকৃতি প্রেমীদের খুঁজে পাওয়া না গেলেও আপনগতিতে ফুটে উঠেছে এসব গ্রীস্মের ফুল।
গ্রীস্মের দাবদাহ থেকে শ্রমজীবীদের স্বস্তি দিতে প্রকৃতির এ আয়োজন যেমন মন ভরিয়ে দিচ্ছে, তেমনি করোনার মধ্যে গ্রামীণ জনপদে লকডাউনে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে সোনালু আর জারুলের সৌন্দর্য ক্ষণিকের জন্য হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। নগীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, কীর্তনখোলা নদী তীরের ডিসি ঘাট সংলগ্ন এলাকা, সার্কিট হাউজ, চৌমাথা লেক, বিএম কলেজ ক্যাম্পাস ও ঢাকাণ্ডবরিশাল মহাসড়ক জুড়েও রয়েছে বাহারি ফুলের এমন সাজ। কয়েকটি এলাকার রাস্তার দুই ধারে পথগন্ধা ভাঁটফুলসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গার্ডেনে ফুটেছে বাহারী রংয়ের ফুল। প্রকৃতি প্রেমী ও প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু তার ইউনিয়নের প্রত্যেকটি সড়কে রোপন করেছেন অসংখ্য দুর্লভ বৃক্ষ। সেইসব বৃক্ষগুলো আজ ফুলে ফুলে ভরে গেছে।
জেলার বৃক্ষ প্রেমী ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, গত পাঁচ বছরে ইউনিয়নের প্রত্যেকটি রাস্তার দুইপাশে দুর্লভ ফলদ, বনজ, ঔষধী গাছের পাশাপাশি পাঁচটি চেয়ারম্যান গার্ডেনে বকুল, হৈমন্ত, কুরচী, সোনালু, রাধাচূড়া, কেছিয়া, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, করবী, জারুল, পলাশসহ বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির ফুলগাছ রোপন করেছি। সেইসব ফুল গাছে গত দুইবছর থেকে প্রচুর ফুল ধরছে। বাহারি রঙয়ের ফুলের রাজ্যে প্রকৃতির আয়োজনে গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত প্রকৃতি প্রেমীরা মুগ্ধ হবেন এটাই আমার বড়প্রাপ্তি।
ঘর বেঁধেছে বাবুই ॥ “বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে”। কবি রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ কবিতার প্রতিটি বাক্য কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছিলো।
কারণ গ্রামীণ জনপদ থেকে বাবুই পাখিদের বাসা বাঁধার তাল ও খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এবছর গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় নিজ শিল্পকর্মের মাধ্যমে ঘর বাঁধতে শুরু করেছে বাবুই পাখি। প্রকৃতিতে রঙ বেরংয়ের নানা ফুলের সমাহার, চোখ ধাঁধানো ফুলের সৌন্দর্য আর বাবুই পাখির খরকুটো দিয়ে বানানো নিপুন শিল্পকর্ম করোনার কারণে লকডাউনে থাকা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে ভিন্নতা এনে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *