বিনোদন

স্বাস্থ্যবিধি মেনে কতটা বাস্তবসম্মত হবে সিনেমা ও নাটক?

Share this:

মহামারী করোনাভাইরাস বিস্তাররোধে দীর্ঘসময় বিরতির পর শুরু হয়েছে সিনেমা ও নাটকের শুটিং। তবু তেমন ব্যস্ততা নেই সিনেমা কিংবা নাটকপাড়ায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি শুটিং করতে হয় তবে গতানুগতিক গল্প থেকে বেরিয়ে একেবারেই ভিন্ন ধারায় কাজে ফিরতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এর মধ্যে একটি বিষয় আলোচ্য।

তা হচ্ছে অন্তরঙ্গ বা কাছাকাছি দৃশ্য ছাড়া কতটা বাস্তবসম্মত করা যাবে নাটক বা সিনেমা- এমন প্রশ্ন নিয়ে ডেইলি বাংলাদেশে টাইমের সঙ্গে কথা হয় বড় পর্দা ও ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নির্মাতাদের সঙ্গে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর মনে করেন, এ দেশে বাস্তবসম্মত খুব বেশি ছবি যে হয়েছে তা নয়। তিনি বলেন, ‘আগে পরে যখনই হোক- কাজ আরম্ভ করা উচিত। কিন্তু নিরাপত্তা রেখে। জীবনটা আগে। জীবন থাকলে বিনোদন করা যাবে। কিন্তু বিনোদন করতে গিয়ে জীবন নষ্ট করা যাবে না। যাই হোক নিরাপত্তা বজায় রেখে কাজ করতে হবে। জীবনঘনিষ্ঠ বলে তো কিছু নেই। এ দেশে বাস্তবসম্মত কোন ছবি হয়?’

পরিস্থিতির সঙ্গে তালমিলিয়ে গল্প লেখার আহ্বান জানিয়ে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, ‘পরিস্থিতির অনুধাবন করেই গল্পগুলো নির্ধারণ করতে হবে। গল্পের প্রয়োজনে হয়তো কাছাকাছি আসতে হতো। এখন গল্পটি এমন করতে হবে কাছাকাছি না এলেও তাতে সমস্যা নেই। গল্পকে যেভাবে সুন্দরভাবে তৈরি করা হবে, জিনিসটা কিন্তু ওইভাবেই দাঁড়াবে। গল্পে যদি ওইভাবে চরিত্রগুলো নির্ধারণ করা হয় তখন কাজের ক্ষেত্রেও খুব স্বাভাবিক মনে হবে।’

তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বলেছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না, এটি পারফেক্ট সময়। সিনেমা তো আর নাটক নয়। নাটকের জন্য তো অল্প কিছু মানুষ নিয়ে একটি বাসার মধ্যে থেকে শুটিং করা যায়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব। কিন্তু সিনেমা তো একটি বড় জায়গা। যেখানে অনেক মানুষের একসঙ্গে কাজ করতে হয়, সেট ফেলতে হয়। এত এত মানুষ সেখানে একসঙ্গে কাজ করে। কতজনকে আর স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব। অন্তরঙ্গ বা কাছাকাছি দৃশ্য তো পরের বিষয়। সিনেমার শুটিং হলে তো এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’

করোনা টেস্ট করে শুটিং করতে হবে- বলেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, ‘সিনেমায় অবশ্যই ঘনিষ্ঠ হতে হয়। হাত ধরতে হয়, বুকে মাথা রাখতে হয় ও স্পর্শে আসতেই হয় অনেক সময়। কাজেই এখানে ওইভাবে দূরত্ব মেনে কাজ করা সম্ভব নয়। যে কারণে আমরা আগে বলেছি, কোভিড-১৯ পজেটিভ না নেগেটিভ পরীক্ষা কর। তারপর শুটিংয়ে আস। এতে করে ঝুঁকির শঙ্কা অনেকাংশেই কম হবে।’

নির্মাতা অনিমেষ আইচ বলেন, ‘কোভিড-১৯ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেমা-নাটক কোনেটিই ঠিকমতো হবে না। এত নিয়মকানুন নিয়ে কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। সাময়িক সময়ের জন্য এগুলো হবে হয়তো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফেরা অসম্ভব। কারণ জীবন না বাঁচলে সিনেমা কীসের।’

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর বড় প্রশ্ন- অন্তরঙ্গ বা কাছাকাছি দৃশ্যে অভিনয় করাটা নাকি বেঁচে থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জীবনটিকে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। এ মুহূর্তে অন্তরঙ্গ দৃশ্য প্রাণবন্ত করে তোলা বড় বিষয় নয়। আমার কাছে বড় প্রশ্ন, ওই দৃশ্যে অভিনয় করা নাকি বেঁচে থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ। যারা কাজ করতে যাচ্ছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করবেন। এটি একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়। আর কোন দৃশ্যায়ন কীভাবে কে করবে, কতটা জীবনঘনিষ্ঠ হবে- সেটি তো নির্ভর করে পরিচালকের ওপর। তার দক্ষতা ও সচেতনতার ওপর নির্ভর করে হবে মূল কাজটা।’

অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির মনে করেন, একজন ভালো পরিচালক নিজের কাজের মাধ্যমে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্তরঙ্গ দৃশ্য যে করতেই হবে- এটি অত্যাবশ্যকীয় নয়। অনেক সময় অনেক কিছু বোঝানোর জন্য আমরা অন্তরঙ্গতা দেখাই। শুধু হাত ধরে হাঁটলে, জড়িয়ে ধরলেই যে অন্তরঙ্গ বা মধুর দৃশ্য হবে- তা কিন্তু নয়। শুধু চোখে চোখেও কিন্তু অন্তরঙ্গ দৃশ্য মধুর হতে পারে। অনেক পদ্ধতি আছে। সবকিছুই নির্ভর করবে পরিচালকের ওপর। তিনি কীভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করবেন। যে অভিনয় জানে সে এক্সপ্রেশনের মাধ্যমেই নিজের চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে পারে।’

অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, ‘এভাবে দূরত্ব বজায় রেখে শুধু অভিনয় নয়- কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। বাস্তবিক জীবনে একে-অপরের থেকে তিন ফুট দূরত্বে কখনই চলিনি। মনে করেন, এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছে, তারা কিন্তু তিন ফুট দূরে দাঁড়িয়ে গল্প করে না। শুটিংয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি তেমনি কঠিন হয়ে যাবে। গল্প যদি একটু ভিন্নভাবে সাজানো হয় তবে কিছুটা করা যাবে। সেভাবে আর কয়টা গল্প করা যাবে বা কতটুকু দেখতে ভালো লাগবে। স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের হাত ধরবে, কাঁধে মাথা রাখবে- এটি কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপার। স্ক্রিনে যখন দেখি তখন যেন তা জীবনের সঙ্গে মিলে যায় বা জীবনঘনিষ্ঠ হয়।

ওইভাবেই কাজটি করা হয়। এসব বিষয়গুলো যদি আমার অভিনয় থেকে বের হয়ে যায়, আমি যদি কারও হাত ধরে একটি ডায়ালগ না দিতে পারি বা কাজের জায়গায় যদি স্বাধীনতা না থাকে- তবে কাজটি তো কাজের মতো হবে না। তা ছাড়া মনে ভয় নিয়ে তো কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। কাজটিও ঠিকমতো হবে না আর কাজে কনসেনট্রেট করা যাবে না।’

নাট্য পরিচালক এসএ হক অলিক বলেন, ‘জীবনঘনিষ্ঠ মানেই যে অন্তরঙ্গতা- তা তো নয়। বিষয়টি নির্ভর করবে গল্পের ওপর। আমরা যে নাটকে অভিনয় করি এটি কিন্তু জীবনের একটি অংশ। অন্তরঙ্গ দৃশ্য ছাড়া বাকি অংশটুকু উপস্থাপন করলেই তো হয়। মা রান্না করছে, ছেলে অপেক্ষা করছে। মা রান্না করে দিল, ছেলে খেল। এর চেয়ে জীবনঘনিষ্ঠ দৃশ্য আর কী হতে পারে। এখানে অন্তরঙ্গ হওয়ার কিছু নেই।

তবে নাটকে বিষয়গুলো একটু কমই দেখা যায়। চলচ্চিত্রে অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ব্যবহার বেশি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা এ দৃশ্যে অভিনয় করবেন তাদের নিরাপত্তার দরকার আছে। তাই এ দৃশ্যগুলো আপাতত বাদ দিতে পারলেই ভালো হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *